‘গুম এমন একটা শব্দ, যা শুনলে মানুষ আঁতকে উঠে’

গুমের শিকার ছাত্রদল নেতা কাজী সাইফুল
কাজী সাইফুল গুম হওয়ার ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন। ছবি-সংগৃহিত। 

কাজী সাইফুল গুম হওয়ার ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন। ছবি-সংগৃহিত। 

প্রকাশিত

`আমাকে বেলা ২টার সময় গুলশান থেকে ধরে নিয়ে যায়। ধরার পরে গাড়িতে ওঠানো থেকে আমার প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। গাড়িতে ওঠানোর পর থেকে নির্যাতন শুরু হয়। সেখান থেকে রাত ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় পেটানো হয়েছে। হাত–পা বেঁধে আমার পায়ের নিচে দুশ–তিনশ লাঠির দাগ আছে।‘

এভাবেই অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজের গুম হওয়ার পর নির্যাতনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল নেতা কাজী সাইফুল। আওয়ামী লীগ আমলে তিনি গুমের শিকার হয়েছিলেন।

আজ শনিবার খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন শীর্ষক সংলাপে তিনি এমন নির্যাতনের বর্ণনা দেন।

তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল নেতা কাজী সাইফুল বলেন, ‘গুম এমন একটা শব্দ, যেটা শুনলে মানুষ আঁতকে উঠে। যারা গুমের শিকার হয়েছেন, যাদের পরিবার গুমের শিকার হয়েছেন, একমাত্র তাঁরাই এটা উপলব্ধি করতে পারবেন।’

কাজী সাইফুল বলেন, ‘আমি দুই দিন গুম ছিলাম। বিএনপির হরতাল কর্মসূচিতে মিছিল করার অপরাধে আমাকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আমাকে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে ঝুলিয়ে শরীরের পেছন থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত পেটানো হয়েছে। এটা শেষ সময় যারা গুম হয়েছেন তাঁরাই জানেন, নির্যাতন কতটা অমানবিক ও হিংস্র! এ দেশে এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়। এ গুমের সঙ্গে যে রাজনৈতিক সংগঠন জড়িত, প্রশাসন ও পুলিশ জড়িত—তাদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

গুমকারী কর্মকর্তাদের অধিকাংশই এখনো বহাল তবিয়তে আছেন দাবি করে করে কাজী সাইফুল বলেন, ‘কাউকে হয়তো বদলি করা হয়েছে। হয়তো কেউ পুলিশে ছিল, তাকে নেওয়া হয়েছে ডিবিতে, ডিবি ঢাকায় থাকলে অন্য জায়গায় নেওয়া হয়েছে। এটাতো বিচার না। নির্মম নির্যাতনকারী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

এ সময় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘৬ শতাধিক ছাত্রদলের নেতা–কর্মী গুম হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম ছিল ছাত্রলীগের একটা ইউনিট। আর কত সময় গেলে তাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেবেন? শুধু ট্রাইব্যুনালের জন্য তো বসে থাকলে হবে না। এর আগের প্রক্রিয়ায় তো দৃশ্যমান অগ্রগতি নাই।’

জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে এক শিক্ষার্থীকে ধরে গুলি করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমান উল্লাহ বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীতে যে গুলি করেছিল সেই থানার এডিসি, সে একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার ভাতিজা। কিন্তু এরপরে আর কিছু দেখলাম না। এখানে উদাসীনতা দেখালে বিচার হবে না। প্রত্যেকটা জায়গায় ওরা রয়ে গেছে। এটা কয়েক দিনে সরাতে পারবেন না, কিন্তু আপনাদের আন্তরিকতায় স্পষ্ট ঘাটতি। আবার যদি চিন্তা করেন, একে সরিয়ে কাকে আনব, বিএনপি না জামায়াত। সেই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে বাংলাদেশের মানুষকে ভোগাবে।’

সাংবাদিক মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপের দ্বিতীয় দিন আজ উপস্থিত আছেন বিএনপির মিডিয়া সেলের প্রধান জহির উদ্দিন স্বপন, জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ, ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য জাহিদ আহসান প্রমুখ।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com