ওই অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস দেশের তরুণ নেতাদের পরিচয় করিয়ে দিতে মঞ্চে ডাকেন। আর ওইসময় মঞ্চে ওঠা এক তরুণকে নিয়ে অনলাইন ও অফলাইনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায় ড. ইউনূসের আহ্বানে সেদিন মঞ্চে উঠেছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ড. ইউনূসের বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা তিথি ও অপর এক তরুণ। তারা মঞ্চে বিল ক্লিনটনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, পরে ড. ইউনূসের পাশে গিয়ে দাঁড়ান।
মাহফুজ ও তিথি ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী ছিলেন। তবে তৃতীয় ব্যক্তির নাম ছিল না ৫৭ জনের তালিকায়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, তৃতীয় ওই তরুণের নাম জাহিন রোহান রাজিন। তিনি জল তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাসের প্রতিষ্ঠাতা। আরও জানানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের কেউ নন ওই রাজিন।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে তাহলে সিজিআইয়ের অনুষ্ঠানে কীভাবে অংশ নিলেন রাজিন? এই নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাণিজ্যিক মাগাজিন ফোর্বস ২০২১ সালে প্রযুক্তিগত উদ্যোগ, রিটেইল ও ই-কমার্স এবং সামাজিক প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে ৩০ জন এশিয়ানের তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেই তালিকায় থাকা ৯ বাংলাদেশির একজন ছিলেন জাহিন রোহান রাজিন।
এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম ২৫ জুলাই রাতে ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি তৃতীয় তরুণকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করেন। সেই পোস্টের সারমর্ম, লোকটি একজন অনুপ্রবেশকারী এবং একজন অসৎ ব্যক্তি। তার এ অনুপ্রবেশ নাশকতার অংশ।
মাহফজু তার পোস্টে লিখে, ওই ব্যক্তি অনুপ্রবেশকারী এবং অসৎ। তিনি নিজ ব্যবস্থাপনায় ক্লিনটন ইনিশিয়েটিভের আয়োজনে যোগ দিয়েছেন। আমরা তার উপস্থিতি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতাম না। তিনি ডেলিগেশন দলের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। স্যার যখন আমাদের মঞ্চে ডাকলেন, তিনি তড়িঘড়ি করে দাঁড়িয়ে আমাদের আগে মঞ্চের দিকে ছুটে গেলেন। আমি সেই লোকটির মঞ্চে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারিনি, যদিও আমি সন্দেহ করেছিলাম। মনে হয়, এটা ছিল ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর অন্তর্ঘাতের একটি পূর্ব-পরিকল্পিত কাজ।
তিনি এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে আরও লিখেছেন, আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ, সমন্বয়কারী ও যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা আগামী দিনে গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকব এবং এই অনুপ্রবেশকারীদের ও অন্যান্য জবাবদিহির কথাও লেখেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের একটি গণমাধ্যমকে জাহিন রোহান রাজিন জানান, সিজিআই ফেলো হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পান তিনি।
তিনি বলেন, ড. ইউনূস যখন ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ডাকেন, তখন আমি দর্শকসারিতে বসে করতালি দিচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে পাশে বসা দুইজন বিদেশি ভদ্রলোক বলেন, ‘তুমিও তো বাংলাদেশি তরুণ, তুমিও যাও।’ নিজেকে ২০২১ সালের একজন ইউনূস অ্যান্ড ইয়ুথ ফেলো উল্লেখ করে রাজিন জানান, এরপর কোনকিছু না ভেবেই মঞ্চে উঠেছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এই তরুণকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে দাবি করেছেন। সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুলের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিন জানিয়েছেন, ২০২২ সালে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে কাজ করে করে তার প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকো প্লাস। সেই সুবাদে ছবিটি তোলা হয়। তবে ছবিটি কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে সে বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই।
এছাড়া সামাজিত সে সব পোস্টে রাজিনকে প্রয়াত আওয়ামী এমপি অধ্যাপক মো. হানিফের নাতি এই রাজিন। এছাড়া ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজিনের স্বজনদের ছবিও পোস্ট করেছেন অনেকেই।