
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এই দেশের নীতি, রাষ্ট্রীয় নীতি, সরকারের নীতি, আইন-কানুন, এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে থাকতে হবে। আজ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, বিকাল ৩টায় বরিশালের অশ্বিনী কুমার হলে অনুষ্ঠিত গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার দ্বিতীয় সম্মেলন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশ ও র্যালির প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই কথা বলেন তিনি। সম্মেলনে প্রখ্যাত কৃষক নেতা দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলুকে সমন্বয়কারী ও আরিফুর রহমান মিরাজকে নির্বাহী সমন্বয়কারী নির্বাচিত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠন করা হয়।
নতুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ঐক্যবদ্ধ হোন। নিরাপদ-কর্মসংস্থান-স্বাস্থ্যসেবা ও উন্নয়নমুখী বরিশাল চাই- এই আহবান নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ। অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, যে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি, খেটে খাওয়া মানুষেরা এই দেশ তৈরি করেছিল, আজকে পর্যন্ত তাদের জীবনে মুক্তি আসে নাই। ভূমিহীন কৃষকরা ভূমি পায় নাই। কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত হয় না। শ্রমিকদের মজুরি বাড়ে না। সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারী, সরকারি প্রতিষ্ঠানের তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী, আউটসোর্সিং কর্মচারী, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীদের কোনো সুযোগ সুবিধা বাড়ছে না। দেশের শ্রমিক, কৃষক, কর্মচারী, খেটে খাওয়া মানুষের দাবি দাওয়া শোনার ক্ষেত্রে সরকারের সময় থাকে না।
জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, জনগণের দাবি মানতে হবে। ন্যায্য দাবি মেনে নিয়ে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে হবে। এই দেশের নীতি, রাষ্ট্রীয় নীতি, সরকারের নীতি, আইন-কানুন, এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের সুযোগ নিয়ে আরেক দল উগ্রপন্থী দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা মনে করছে, এই অভ্যুত্থানকে পুঁজি করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানুষের যে লড়াই সেটাকে তাদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে তারা ব্যবহার করবে। তারা নিজেরা ক্ষমতায় যেতে চায় এবং বাংলাদেশে তাদের কর্তৃত্ব কায়েম করতে চায়। আমরা পরিষ্কার করে বলি, হাসিনাকে আমরা তাড়িয়েছি। আবার অন্য কোনো নাম নিয়ে, ধর্মের নাম নিয়ে, কেউ যদি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিতে চায়, বাংলাদেশের মানুষ সেটা মানবে না। সেজন্য আমাদের সংগঠিত হতে হবে। আপনার অধিকার, মানবিক মর্যাদা তার জন্য সংগঠিত হতে হবে।
জোনায়েদ সাকি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর এই দেশে বিচার, সংস্কার, নির্বাচন হচ্ছে আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই মুহূর্তের কর্তব্য। তিনি বলেন, দেশ একটা সন্ধিক্ষণে আছে। পতিত ফ্যাসিবাদ, তাদের দেশ-বিদেশের দোসররা, ভারতীয় আধিপত্যবাদীরা নানান ধরনের ষড়যন্ত্র করছে, কীভাবে এই অভ্যুত্থানকে ধ্বংস করে দেওয়া যায়। আন্দোলনকারী অনেকগুলো শক্তির রাজনৈতিক ভিন্ন ভিন্ন পার্থক্য থাকলেও যতটুকু ঐক্য হয়, সেই ঐক্য বাস্তবায়ন করার জন্য আমাদের এখন কাজ করতে হবে। আর যেসব বিষয়ে মতের পার্থক্য আছে, আগামী নির্বাচনে জনগণ এই পার্থক্যের মীমাংসা করবে। জনগণকে ক্ষমতার কেন্দ্রে রাখতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে সেগুলোতে আমরা একমত হয়েছি সেগুলো যাতে বাস্তবায়ন করতে সবাই বাধ্য থাকে তার বাধ্যবাধকতা তৈরি করেন। যেগুলোতে আমরা একমত নই, দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন দাবি আছে, তার মীমাংসা করার জন্য জনগণের হাতে ছেড়ে দেন। জনগণ যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে তারা সেটা বাস্তবায়ন করবে। সংবিধানের সংস্কারকে টেকসই করার জন্য আগামী নির্বাচনকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, আগামী সংসদকে যদি জনগণ সংবিধানের মৌলিক সংস্কারের ক্ষমতা দেয়, তাহলে আদালত এই সংস্কারকে চ্যালেঞ্জ করবে না বরং তাকে সুরক্ষা দেবে।
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, গণসংহতি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা কাল থেকে জনগণের স্বার্থে তার সংগ্রামকে সর্বোত্তমভাবে জারি রেখেছে। আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের মর্যাদা, অধিকার ও উন্নতির জন্য কাজ করি। আগামীর বাংলাদেশ হবে সবাইকে নিয়ে উন্নতি করার বাংলাদেশ। আগামীর বাংলাদেশে ধর্ম, জাতিগত পরিচয় কিংবা শ্রেণীগত পরিচয় হবে দ্বিতীয় বিষয়। প্রথম বিষয় আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশে কেউ ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে কিংবা ধর্মের নামে কোনো রকম জবরদস্তির শাসন বাংলাদেশ শাসন হবে না।
সম্মেলনের সভাপতির বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার সমন্বয়কারী দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে রাষ্ট্রের মেরামত করে একটা মানবিক ও জনগণের রাষ্ট্র গড়ে তোলার জন্য নতুন করে সুযোগ দিয়েছে। গণসংহতি আন্দোলন তার প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই জনগণের রাষ্ট্র গড়ে তোলার সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা তিনটা দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তা হলো বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। সরকারের কাজে এই দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের ক্ষেত্রে গাফিলতি দেখা যাচ্ছে। আমরা চাই, সরকার কাজে জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হোক।
গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাকিবুল ইসলাম সাফিনের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে আরও দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুঁইয়া, বাংলাদেশ কৃষক মজুর সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আলিমুল কবীর, বাংলাদেশ যুব ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক জাহিদ সুজন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ফাতেমা রহমান বিথী, দলের বরিশাল জেলার নির্বাহী সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান মিরাজ সহ দলের বিভিন্ন অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ।
গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলার নব-নির্বাচিত কমিটি:
সমন্বয়কারী- দেওয়ান আবদুর রশিদ নীলু
নির্বাহী সমন্বয়কারী- আরিফুর রহমান মিরাজ
সহ নির্বাহী সমন্বয়কারী- মারুফ আহমেদ
সাংগঠনিক সম্পাদক- রুবিনা ইয়াসমিন
সহ সাংগঠনিক সম্পাদক - ১. সাকিবুল ইসলাম সাফিন, ২. রুমা আক্তার
অর্থ সম্পাদক - ইয়াসমিন সুলতানা
প্রচার সম্পাদক - মনির হোসেন
শিক্ষা গবেষণা ও দপ্তর সম্পাদক - হাছিব আহমেদ
সদস্য :
১. রাশেদুল ইসলাম, ২. শ্যামলি আক্তার, ৩. আব্দুর রশিদ তালুকদার, ৪. হাসিনা বেগম, ৫. জাকির তালুকদার, ৬. তামান্না আক্তার, ৭. নুর জাহান বেগম, ৮. মো: রেজাউল করিম, ৯. সরোয়ার খলিফা, ১০. মো: আরিফ হোসেন, ১১. মো: খায়রুল হোসেন ১২. একটি সদস্যপদ শূন্য রাখা হয়েছে।