সাত দেশের ১৭ হাজার প্রবাসী ভোটারের আবেদন অনুমোদন

সাত দেশের ১৭ হাজার প্রবাসী ভোটারের আবেদন অনুমোদন
প্রকাশিত

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে সব মহলে আলোচনা হলেও তাদের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রমে তেমন অগ্রগতি নেই। ফলে ভোটদান পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারলেও কত শতাংশ ভোট তাদের থেকে আসবে তা নিয়েও অনেকের রয়েছে সংশয়।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও মালয়েশিয়া; এই সাতটি দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করছে ইসি। এক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করে দূতাবাসে এসে ফটো তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এছাড়া কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরে কার্যক্রমটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, সাতটি দেশ থেকে মোট আবেদন পড়েছে ৪২ হাজার ২৬৯টি। যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েছে তিন হাজার ৪০১টি আবেদন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে ২০ হাজার ১৮৪টি আবেদন। তদন্ত শেষে আবেদন অনুমোদন হয়েছে ১৭ হাজার ৬০৭ জনের। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে ৪৫৭ জনের আবেদন। আর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আঙুলের ছাপ ও ছবি নেওয়া হয়েছে ২২ হাজার ১২৮ জনের। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ১৮ হাজার ৫৮৯টি। আর সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে মালয়েশিয়ায় ৭৮৪ জন। গত বছরের মে থেকে এই আবেদনগুলো এসেছে।

নির্বাচন কমিশন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এইসব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মৌরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস।

এসব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছে। সবচেয়ে রয়েছে বেশি প্রবাসী রয়েছে সৌদি আরবে, ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন। আর সবচেয়ে কম রয়েছে নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ৫শ জন।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন ওই ৪০টি দেশেই কার্যক্রমটি সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে তা হাতে নিতে হচ্ছে। তবে যেসব দেশে কার্যক্রম চলমান, সেখান থেকেও খুব একটা সাড়া মিলছে না।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসীদের ভোটার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে পাসপোর্ট। কেননা, বৈধ পাসপোর্টধারী ছাড়া কারো আবেদন তারা আমলে নিচ্ছে না। এছাড়া ভৌগলিক অবস্থানও একটা কারণ। অন্যদিকে অনেকেই নিরক্ষর হওয়ার কারণেও আসছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের প্রবাসীদের অধিকাংশই কাজের জন্য বিদেশ গিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে কাজ সেরে বা কাজের ফাঁকে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে এসে ভোটার হওয়া অনেকের জন্যই প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। একজন ব্যক্তি হয়তো ভোটার হতে চান, আর তার কর্মক্ষেত্রে হয়তো কোনো রিমোট অঞ্চলে, তাহলে অর্থ ও সময় ব্যয় করে তিনি সংশ্লিষ্ট দেশের রাজধানীতে স্থাপিত আমাদের দূতাবাসে এসে ভোটার হতে চাইবেন না, এটাই স্বাভাবিক।

আবার অনেকেই প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন বৈধ কাগজপত্র ছাড়া। হয়তো ভুয়া কাগজ বানিয়ে গেছেন। কিন্তু এখন আর সঠিক কাগজ দেখাতে পারছেন না। ফলে সেটাও আইনের বরখেলাপ হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকের আগ্রহ থাকলেও ভোটার করে নেওয়া যাচ্ছে না। তাই সেভাবে এগুচ্ছে না।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ বলেন, আমরা সাতটা দেশে ভোটার কার্যক্রম চালাচ্ছি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের আমাদের দূতাবাসের লোকবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তারা একটা নির্দিষ্ট ফি নিয়ে ভোটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অর্থাৎ তারা অনলাইনের তথ্যের ইনপুট দেওয়া, ছবি তোলা ও চোখের আইরিশ নেওয়ার কাজটি করে দিচ্ছে। এরপর সেই ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সেই আবেদনের সত্যতা প্রমাণে তদন্ত করছেন। তদন্তে সত্যতা মিললে সেটিকে আমরা অনুমোদন দিচ্ছি। এরপর প্রবাসীর এনআইডি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে।

তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আইনের ব্যত্যয় করা যায় না। বৈধ কাগজপত্র থাকলে এবং ভোটার হতে চাইলে তার জন্য কোনো অসুবিধা নেই। খুব সহজেই ভোটার হতে পারবেন।

অন্যদিকে প্রবাসীদের অনেকেই দেশ থেকেই ভোটার হয়ে গেছেন। কেননা, যারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর বিদেশে গিয়েছেন, তারা এনআইডি ছাড়া পাসপোর্ট করতে পারেননি। কাজেই আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, প্রবাসীদের অধিকাংশেরই এনআইডি আছে এবং তারা ভোটার হয়েছেন। অন্যরা যারা হননি, তাদের জন্যই আমরা সুযোগটি সৃষ্টি করেছি। তবে বৈধ কাগজপত্র লাগবে। ভোটদান পদ্ধতি নির্ধারণ হলে ভালো সাড়াই মিলবে বলে আশা করি।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতে এসে রবিবার (২০ এপ্রিল) প্রবাসীদের ভোটদান নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো ভালো পদ্ধতি পায়নি কমিশন। প্রবাসীদের ভোটাধিকার যদি নিশ্চিত না করা হয়, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, প্রবাসীদের ভোটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আইনে যেভাবে আছে, সেভাবে ভোটার হয়ে যাবেন। আর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য কমিশন পদ্ধতি খুঁজছে। এক্ষেত্রে তিনটি পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যে কোনো পদ্ধতিতে ভোট হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগ হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনে ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।

এরপর সৌদি আবর, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।

পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। সেই কার্যরক্রমকেই এগিয়ে নিচ্ছে বর্তমান নাসির কমিশন।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com