
কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা এক কিশোরী আজ সারা দেশের কাছে অনুপ্রেরণার নাম। চিলমারী উপজেলার রাণিগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরেরহাট বাজার এলাকার মেধাবী ও ক্রীড়াবিদ সুবর্ণা আক্তার দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে। ৫৩তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দীর্ঘলাফ (লংজাম্প) ও ৪০০ মিটার রিলে দৌড়ে প্রথম স্থান অধিকার করে সে ইতিহাস গড়েছে।
(২৭ ফেব্রুয়ারি) এলাকায় মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ র্যালি করেছে সুবর্ণার সহপাঠীরা।
সুবর্ণা ফকিরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই মেধাবী শিক্ষার্থীর বাবা বাচ্চা মিয়া একজন ভ্যানচালক, আর মা রূপালী বেগম গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট সুবর্ণা। পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলায় তার অসামান্য আগ্রহ ও প্রতিভা তাকে আজ এই সাফল্যের মুখ দেখিয়েছে।
সুবর্ণা বলে, "আমি খেলাধুলা অনেক পছন্দ করি। আমাদের স্কুলে প্রতিযোগিতা হলে আমি অংশ নিই। এবারও শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সফল হয়ে জাতীয় পর্যায়ে গিয়েছি। সেখানে দীর্ঘলাফ ও ৪০০ মিটার রিলে দৌড়ে প্রথম হয়েছি। সরকারি সহায়তা পেলে আমি শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের সুনাম ছড়াতে চাই।"
সুবর্ণার সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার, সহপাঠী ও শিক্ষকরা। তার বাবা বাচ্চা মিয়া বলেন, "আমরা নদীভাঙা মানুষ, পড়ালেখা বুঝি না। কিন্তু মেয়েটা পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও ভালো। স্কুলের শিক্ষকরা তাকে নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে নিয়ে গিয়েছিল, সেখানে সে প্রথম হয়েছে। খুব খুশি হয়েছি।"
ফকিরেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষক শফিয়ল আলম বলেন, "প্রতিবছর আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করে। এবার সুবর্ণা আক্তার ও ইয়ামিন সরিকা সম্মিত জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেয়। সুবর্ণা লংজাম্প ও রিলে দৌড়ে প্রথম হয়েছে। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।"
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, "আমাদের স্কুলের সুনাম রয়েছে। এবার সুবর্ণা ও সম্মিত জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে। তারা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা। আমরা চাই, তারা শুধু জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করুক।"
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, "প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা সুবর্ণা দেশসেরা হয়েছে, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমরা তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি।"
সুবর্ণার এই সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটা দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে স্বপ্ন দেখার এবং তা বাস্তবায়নের এক অনন্য উদাহরণ। তার এই কৃতিত্ব কুড়িগ্রাম তথা বাংলাদেশের জন্য গর্বের, এবং তরুণ প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল অনুপ্রেরণা।