মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মত উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এ কাজে তাদের সহযোগিতা করছেন কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
এরআগে সোমবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে দুর্বৃত্ত জেলেদের হামলায় উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের শ্রীখোল এলাকায় নিখোঁজ এ দুই পুলিশ সদস্য। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন এক উপ উপরিদর্শক ও দুই ইউপি সদস্য।
নিখোঁজ পুলিশ সদস্যরা হলেন: কুমারখালী থানার সহকারী উপপরিদর্শক সদরুল হাসান (৪০)। তিনি পাবনার আতাইকুলা থানার কাজিপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবের বড় ছেলে। আরেক সহকারী উপরিদর্শক মুকুল হোসেন (৪০)। তিনি মেহেরপুরের কালাচাঁদপুর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের ছেলে।
আহতরা হলেন: কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর সদস্য ছানোয়ার হোসেন ছলিম ও ৬ নম্বর সদস্য আনোয়ার হোসেন টিটন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী ও কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সাব অফিসার ফিরোজ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘খবর পেয়ে সোমবার সকাল থেকে তারা পদ্মায় অভিযান শুরু করেন। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খুলনার ডুবুরি দল অভিযান চালায়। তবুও নিখোঁজদের সন্ধান না পাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে পুনরায় অভিযান শুরু করা হয়েছে। তবে নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এ অভিযান চলমান থাকবে।’
তবে বিষয়টি নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রহস্য দেখা দিয়েছে। পুলিশ বলছে, থানার ৬ পুলিশ সদস্য গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি ধরতে গিয়েছিলেন। এ সময় দুই নৌকার সংঘর্ষে দুজন নিখোঁজ হন।
তবে জেলেরা অভিযোগ করেছেন, সাদা পোশাকে আসা পুলিশ সদস্যরা দুজন ইউপি সদস্যকে নিয়ে অবৈধভাবে ইলিশ শিকারকারী জেলেদের নৌকায় যান। সেখানে থেকে মাছ লুট করে ফিরছিলেন। ডাকাত ভেবে তাদের ওপর হামলা করে জেলেদের একটি অংশ। সংবাদ পেয়ে জেলেদের নেতারা গিয়ে আহত অবস্থায় একই থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম, কয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. ছলিম ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন টিটনকে উদ্ধার করেন।
কয়েকজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে অসাধু জেলেরা নদীতে মাছ ধরছিল। গভীর রাতে দুই ইউপি সদস্য ও ৬ পুলিশ সদস্য পদ্মা নদীর বেড় কালোয়া যান। তারা অভিযানের কথা বলে কয়েকজন জেলের কাছ থেকে ইলিশ মাছ ও তেল ছিনিয়ে নদীর অন্য প্রান্তে চলে যান। পরে শিলাইদহের শ্রীখোলে তাদের ওপর হামলা হয়।
বেড় কালোয়ার জেলে নেতা ইয়ারুল ইসলাম জানান, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে জেলেরা প্রথমে তাকে কল করে নদীতে ঝামেলার কথা জানান। তখনই তেল ও মাছ লুটপাটের তথ্য পান। পরে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর ৫টার দিকে এএসআই সদরুল ফোনে তাকে বলেন, ভাই আমরা বিপদে আছি, সাহায্য করেন। তখন নৌকা নিয়ে তারা চার জেলে গিয়ে এসআই নজরুলসহ ৪ পুলিশ সদস্য ও দুই ইউপি সদস্যকে উদ্ধার করেন। এ সময় এসআই নজরুলের মাথা ফাটা ছিল।
ইয়ারুলের ভাষ্য, পুলিশ সাদা পোশাকে ছিল। দুই ইউপি সদস্য জেলেদের মাছ, তেল ও টাকা লুটপাট করতে পুলিশ নিয়ে এসেছিলেন। তাদের ডাকাত ভেবে ৩০-৪০ জন জেলে মারধর করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আহত ইউপি সদস্য ছানোয়ার হোসেন ছলিম বলেন, ‘রাতে এসআই নজরুলের স্যারের সঙ্গে নৌকায় করে চর সাদিপুরে আসামি ধরতে যাচ্ছিলাম। পথে ৪০ -৫০ জন তাদের ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীদের মুখ বাঁধা ছিল।’
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘একটি গ্রেফতারি পরোয়ানার আসামি ধরতে গিয়েছিলেন তাদের ৬ সদস্য। এ সময় দুই নৌকার সংঘর্ষে দুই এএসআই নিখোঁজ হন। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। অন্য চারজন সাঁতরে তীরে আসেন।’