আগুনে পুড়ছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন অয়েল ট্যাংকার বাংলার সৌরভ।
চট্টগ্রাম বন্দরের মোহনার কাছেই দাউ দাউ করে জ্বলেছে বাংলার সৌরভ। ১৯৮৬ সালে তৈরি এবং ১৯৮৮ সালে জ্বালানি তেল পরিবহনে রেজিস্ট্রেশন পাওয়া এ অয়েল ট্যাংকারের এটাই ছিল শেষ ট্রিপ। তেল খালাস শেষ হলেই দায়িত্ব থেকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল এর। কিন্তু আগুনে জাহাজটির ব্যাপক ক্ষতি ছাড়াও মারা গেছেন এক নাবিক।
অবশ্য এর চারদিন আগে একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটিতে বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুনে পুড়ে গেছে বিএসসির আরেকটি অয়েল ট্যাংকার বাংলার জ্যোতি। এতে সৃষ্ট বিস্ফোরণের প্রাণ গেছে তিনজনের আর আহত হয়েছেন বেশ কজন। বাংলার সৌরভের মতো এটিও ১৯৮৬ সালে তৈরি এবং জ্বালানি তেল পরিবহনে রেজিস্ট্রেশন পেয়েছিলো ১৯৮৮ সালে। দুটি জাহাজই তৈরি হয়েছিলো ডেনমার্কে।
চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল বলেন, ‘বাংলার জ্যোতিতে আগুন লাগার পর সেইফটি মেজরস বারবার চেক করা হয়েছে এবং অগ্নিনির্বাপণে বেশকিছু মহড়া হয়েছে। এরপরও কেনো এ অগ্নিকাণ্ড, সেটা তদন্ত সাপেক্ষ!’
বিস্ফোরণ এবং আগুন লাগার আগে বাংলার জ্যোতি জাহাজে ১১ হাজার ৭শ মেট্রিক টন এবং বাংলার সৌরভে ১১ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল ছিল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জন্য আনা হয়েছিল বিপুল এ জ্বালানি তেল। একেবারে শেষ ট্রিপে দুটি ট্যাংকারে একই ধরনের আগুন লাগা এবং বিস্ফোরণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন। নাশকতার আগুনে জাহাজ দুটি পুড়েছে কিনা -- সেটা মাথায় রেখেই শুরু হয়েছে তদন্ত।
বিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা জাহাজের চারটি পয়েন্ট সিকুয়েন্সলি ফায়ার হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, এটি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। আর এটা মাথায় রেখেই তদন্ত শুরু হয়েছে।’
তবে জাহাজ দুটির আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে এনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের কবল থেকে জ্বালানি সেক্টরের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরকে রক্ষা করেছে নৌ বাহিনী এবং কোস্টগার্ড। বিশেষ করে বাংলার জ্যোতির ঘটনায় ডলফিন জেটির পাশেই ছিল একাধিক তেলবাহী জাহাজের অবস্থান। এছাড়া, তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনাও ছিল একেবারেই কাছে। আর বাংলার সৌরভের পাশে ছিল বেশকটি মাদার ভ্যাসেল। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে জাহাজসহ এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক দিনমণি শর্মা বলেন, ‘ইনবিল্ড অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যদি আরও ভালো থাকতো, তাহলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো।’
মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সাবেক মহাব্যবস্থাপক আকতার কামাল বলেন, ‘বন্দরে পাশাপাশি অনেক জাহাজ থাকে। ফলে একটির আগুন যদি ছড়িয়ে পড়তো, তাহলে এ আগুন নেভানোর কোনো সুযোগ ছিল না এবং ভয়াবহ রকম ক্ষতি হতো।’
বাংলার জ্যোতি এবং বাংলার সৌরভ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বর্তমানে বিপিসির মালিকানায় ৩টি অয়েল ট্যাংকারসহ ৫টি জাহাজ রয়েছে।