নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার মোঃ মাইনুল হাসান পিপিএম, এনডিসি বলেছেন, আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রি.) সকালে ডিএমপি হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে এএসপি প্রবেশনারদের ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
সাম্প্রতিক সময়ে নিহত পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক কিছু নতুন করে শুরু হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট। এটা অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। এখানে প্রায় ৩৫ হাজার জনবল রয়েছে। যাদের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরবাসীকে পুলিশি সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ তিন ধরনের কাজ করে। প্রথম কাজ হলো সামাজে অপরাধ যাতে না হয় তার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দ্বিতীয় হচ্ছে ঘটনা ঘটার পর অপরাধের সঠিক কারণ নির্ণয়, অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য তদন্ত ও অনুসন্ধান করা। এই দুই ধরনের কাজকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তৃতীয় যে কাজটি করা সেটা হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করা। এই ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহের কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ মানুষের কাছে না গেলে ইন্টেলিজেন্স পাওয়া যাবে না। তাই আপনাদের মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে। যত মানুষের কাছাকাছি যাবেন তত ইন্টেলিজেন্স পাবেন। আর যত ইন্টেলিজেন্স পাবেন অপরাধ প্রতিরোধে তত বেশি কাজে লাগবে।
কমিশনার বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান কাজ হচ্ছে জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। একটি দেশে যদি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা না থাকে তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দেশের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। অবশ্যই জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কাজ। জনশৃঙ্খলা রক্ষার এ চ্যালেঞ্জিং কাজটি আপনাদেরকে করতে হবে। সামনের দিনগুলিতে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে। আর নিজেকে প্রস্তুত করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে প্রশিক্ষণ। সুতরাং অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) বলেন, প্রত্যের মানুষ কাউকে না কাউকে তার আদর্শ মানে, সম্মান করে। আপনাকে কেউ সম্মান করবে কী না সেটা আপনার কর্মের উপরই নির্ভর করে। আপনাকে সেভাবেই প্রস্তুত হতে হবে। নিজেকে নেতা হিসেবে তৈরি করতে হবে। অনেক সময় পুলিশকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার যোগ্য হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।
নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) বলেন, যে কোন চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন, আসামী গ্রেফতার ও আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ডিবি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ডিবি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কিশোর অপরাধ, সোস্যাল মিডিয়া ক্রাইম, অনলাইন গুজব ও সাইবার অপরাধ দমনে ডিবি রাতদিন কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত বাস্তবতায় ডিবি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সাধাণ মানুষের মনে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে সবাই আপনাদের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করবে। সুতরাং আপনাদের দায়িত্ব পালন হতে হবে জবাবদিহিমূলক ও স্বচ্ছ।
অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বলেন, পুলিশ ও সমাজ অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িত। একে অপরের পরিপূরক। পুলিশের কাজ সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পুলিশের কাজ অক্সিজেনের মতো। দেখা যায় না তবে তা না থাকলে এর অভাব অনূভব করা যায়। অক্সিজেন ছাড়া যেমন মানুষ চলতে পারে না পুলিশ ছাড়াও একটি সমাজ চলতে পারে না।
প্রসঙ্গত, ডিএমপি পিআরএন্ডএইচআরডি বিভাগের ট্রেনিং একাডেমীর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত বিসিএস পুলিশ ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন কোর্সে ১০৭ জন কর্মকর্তা অশগ্রহণ করছেন। কোর্সটি চলবে আগামী ৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত। এতে ডিএমপির বিভিন্ন বিভাগ ও তার কার্যাবলী সম্পর্কে সদ্য যোগদানকৃত সহকারী পুলিশ সুপারদের সম্যক ধারণা দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোঃ ইসরাইল হাওলাদার; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মোঃ শওকত আলীসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উপ-পুলিশ কমিশনার,
মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।