
ছবি-পরিবার থেকে সংগৃহিত।
পটুয়াখালীর বাউফলে মাসে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এক অটোচালককে রড ও সুইচগিয়ার দিয়ে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।
ভূক্তভোগীর নাম সুজন হাওলাদার (৩০)। তিনি বাউফলে কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়নপাশা গ্রামের দরিদ্র কৃষক নবী হাওলাদারের ছেলে। নিহতের স্ত্রী ও ছোট দুই সন্তান রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার বিকাল ৫টার পর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আমিরাবাদ বাজার সংলগ্ন পোলের গোড়ায় মিজানুরের কার্মেসীর সামনে পাকা রাস্তার উপর সুজনকে আক্রমণ চালানো হয়। তাকে আক্রমণ ও হত্যার ওই দৃশ্য দেখেছে শত শত জনতা। কিন্ত নব্য বিএনপি’র তকমা লাগানো ওই হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক মুখ খুলতে সাহস পায়নি কেউই। দীর্ঘক্ষণ পিটিয়েও ওই অটোচালককে অচেতন করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, পেটে সুইচগিয়ার ঢুকিয়ে ভূক্তভোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করে আক্রমণকারীরা সরে যায়। এরপর উপস্থিত জনতা ওই অটোচালকের নিথর দেহ বাউফল স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে নিয়ে আসে। জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার পরীক্ষা নিরিক্ষা করিয়া তার মৃত্যু হয়েছে বলে ঘোষনা করে এবং থানা পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করে। পরে পুলিশ মৃতদেহটি হাসপাতালে জরুরী বিভাগে সুরতহাল রিপোর্ট করতে পাঠায়। এই প্রতিবেদন লেখার সময় দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃতের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করছিল।
এ ঘটনায় দায়েরকৃত এজাহারে নিহতের পিতা নবী হাওলাদার ২০ জনকে আসামী করেছেন। এজাহারে তিনি জানান, বিবাদীরা হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ছেলেকে রাস্তার উপর ফেলাইয়া টানা হেচড়া করিয়া কিল ঘুষি লাথি মারিয়া হাতে, পায়ে, পিঠে সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলা ফাটা রক্তাক্ত জখম করে। এরপর বিবাদীগণ আমার ছেলেকে পাজা কোলে করে ধরে গলা চেপে ধরে শ্বাস রোধ করার চেষ্টা করে। এসময় একজন তার হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ছেলের বাম ছিনার উপর স্বজোরে কোপ দিয়া গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে। অপর বিবাদীর হাতে থাকা ধারালো সুইজ গিয়ার নিয়া হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ছেলের পেটে সুইজ গিয়ার ঢুকাইয়া দিয়া গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে। অন্য একজন বিবাদী তার হাতে থাকা ধারালো চাইনিজ কুড়াল দিয়া আমার ছেলের ডান পায়ের উপরের অংশে স্বজোরে কোপ দিয়া গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে। এমন নিষ্ঠুর অত্যাচার ও অত্যাচারে আমার ছেলে নিস্তেজ হয়ে পড়লেও তারা ক্ষান্ত হয়নি। এক বিবাদী ধারালো চাকু দিয়া আমার ছেলের ডান পাছার উপর পোচ দিয়া গুরুতর কাটা জখম করে এবং আমার ছেলের দেহ নিথর হয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত গলায় পা দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রাখে। এক পর্যায়ে বিবাদীরা আমার ছেলেকে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ঘটনাস্থলে রাস্তার উপর ফেলাইয়া রেখে চলে যায়। এরপর আশ পাশের লোকজন আমার ছেলে সুজন হাওলাদারকে সেখান থেকে উদ্ধার করিয়া অটোগাড়ী যোগে স্বাস্থ কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
নবী হাওলাদার এজাহারে জানান, কনকদিয়া ইউনিয়নে ১নং ওয়ার্ডে কাশেম হাওলাদারের বাড়ীর পশ্চিম ভিটির ঘরে আমি বসবাস করিয়া আসিতেছি। আমার বড় ছেলে মৃত সুজন হাওলাদার আমার পাশের বাড়ীতে বসবাস করে। সে পেশায় একজন অটো গাড়ীর ড্রাইভার। অটো গাড়ী চালিয়ে সে জীবিকা নির্বাহ করে। উল্লেখিত বিবাদীগণ এলাকার চাঁদাবাজ সন্ত্রাস দস্যু প্রকৃতির। তারা ৫ আগস্টের পর থেকেই আমার ছেলের কাছে মাসিক ৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে আসছিল। দাবীকৃত মাসিক চাঁদার টাকা না দিলে আমার ছেলেকে রাস্তায় গাড়ী চালাতে দিবেনা বলে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকিও দিয়ে আসছিল। ইতিমধ্যে কয়েকবার আমার ছেলের অটো গাড়ী পথে ঘাটে আটকিয়ে টাকা পয়সা নিয়েছে।
এজাহারভূক্ত আসামীরা হলো…জাহাঙ্গীর হাওলাদার (পিতা-কাঞ্চন হাওলাদার), মনিমুল মিরাজ ও মুরসালীন (উভয়ের পিতা-মঞ্জুর সরোয়ার), রাসেল (পিতা-জাহাঙ্গীর হাওলাদার), আপেল মাহমুদ মুন্না (পিতা-নাসিরউদ্দিন), এরশাদ হোসেন (পিতা-শাহজাহান), সজল হাওলাদার (পিতা-মোশারফ), আনোয়ার হাওলাদার (পিতা-দেলোয়ার), কাজী মাসুদ (পিতা-মনির কাজী), এনামুল (পিতা-আমিনউদ্দিন), জোনায়েত পিতা-জালাল মিয়া), জিহাদ মুন্সী (পিতা-ছত্তার মুন্সী), এনামুল হক সিপাই (পিতা-বারেক সিপাই), কাওসার মিয়া (পিতা-জালাল মিয়া), রিয়াদ (পিতা-আজাহার), মনিরুল শিপন (পিতা-নজরুল রাড়ী), জহির (পিতা-ফোরকান রাড়ী), খোকন হাওলাদার (পিতা-আইয়ুব আলী) ও প্রিন্স মাহামুদ (পিতা-অহিদুজ্জামান)।