লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন সময় সংবাদকে হত্যাকাণ্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মিরান শেখ ও জিয়ারুল শেখ এবং গুরুতর আহত ইরান শেখ উপজেলার চর মল্লিকপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামের মৃত সামাদ শেখের ছেলে। তারা মল্লিকপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মুরাদ শেখের ভাই।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চর মল্লিকপুর গ্রামে গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারের জেরে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদাউস শেখ ও উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক খান মাহমুদুল আলম সমর্থিত দুই পক্ষের মধ্যে সামাজিক দ্বন্দ্ব আগে থেকেই ছিল। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে যুবদল নেতা সামাজিক দল ভারি করতে প্রতিপক্ষ বিএনপি নেতা সমর্থিত লোকদের বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল।
এ বিষয়ে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপক্ষের লোকদের ডেকে লোহাগড়া থানায় মুচলেকা নিয়ে কোনো ধরনের বিবাদে না জড়ানোর জন্য হুশিয়ার করা হয়। এ সময় থানায় বিএনপি নেতা উপস্থিত থাকলেও যুবদল নেতাকে থানায় ডাকার পরও তিনি অনুপস্থিত ছিলেন।
বুধবার সকালে বিএনপি নেতা ফেরদাউস সমর্থিত মিরান, ইরান ও জিয়াউর সামাজিক মিটিংয়ে অংশ নিতে বাড়ি থেকে রওনা করেন। আইয়ুবের মোড় সংলগ্ন পাচুড়িয়া-লোহাগড়া আঞ্চলিক সড়ক ধরে আগানোর সময় প্রতিপক্ষ যুবদল নেতা খান মাহমুদুলের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এবং তারা এলোপাথাড়ি কুপিয়ে তিন ভাইকে গুরুতর আহত করে। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মিরান শেখ ও জিয়াউর শেখকে মৃত ঘোষণা করেন। তাদের আরেক ভাই ইরান শেখকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠান।
এ ঘটনার পর দুপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত আরও ৫ জন আহত হয়। পরে বিক্ষিপ্ত গ্রামবাসী মাহমুদ শেখ সমর্থিতদের ৩টি বাড়িতে আগুন দেন। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
নিহত জিয়াউরের স্ত্রী শামসুন্নাহার সময় সংবাদকে বলেন, ‘মাহমুদ খার দলে যোগ দেয়ার জন্য আমার স্বামী ও ভাসুরদের বেশ কয়েকবার হুমকি ধামকি দিয়েছেন। তার দলে না যাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামী ও ভাসুরকে হত্যা করেছে। খুনের বদলে তাদের সবার ফাঁসি চাই।’
এদিকে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিহতের স্বজনরা ও এলাকাবাসী এ হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফেরদাউস শেখ সময় সংবাদকে অভিযোগের সুরে বলেন, ‘৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে এলাকায় রামরাজত্ব করতে ও নিজের দল ভারি করতে ভিন্নমতের সবাইকে বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল মাহমুদ। মঙ্গলবার থানায় দুপক্ষ মুচলেকা দেয়ার সময় মাহমুদ ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিত ছিল। সে গতকাল দিঘলিয়া বাজার থেকে রাম দা ও বল্লম বানিয়ে এনেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাকে (যুবদল নেতা মাহমুদ) বেশ কয়েকবার বোঝাইছি, নিজেদের মধ্যে গেঞ্জাম করলে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। বোঝানোর পর সে বলে না এমন কিছু হবে না, আবার পরে সেই কুকর্ম করতেই থাকে। সে লোহাগড়া উপজেলার বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা ও বিএনপি নেতা হত্যাকাণ্ড মিশনে অংশ নিয়ে তাদের হত্যা করছে। দল ভারি করতে আজকের এই জোড়া খুন করেছে মাহমুদ ও তার লোকজন। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাই, এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি তাদের হোক, যেন আর কেউ এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ ঘটানোর সাহস না পায়।’
এদিকে অভিযুক্ত যুবদল নেতা খান মাহমুদুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নড়াইল জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী এহসানুল কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তারের জেরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় ন্যায় বিচার পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা শান্ত থেকে আমাদের সহায়তা করুন, আইনের মাধ্যমে আপনাদের ন্যায় বিচার দেয়া হবে।’