
বিকেল নামতেই একের পর এক তরমুজবোঝাই ট্রলার ভিড়তে শুরু করে মুশুরীকাঠি ঘাটে। তরমুজ নিতে তীরে অপেক্ষা করে শত শত ট্রাক। পাইকারি ক্রেতার সঙ্গে দরদামে কৃষকের বনিবনা হলে ট্রলারের গলুইতে নেমে আসেন শ্রমিক। কোনটিতে পাঁচজন, কোনটিতে ১০ জন। তার বেশিও দরকার পরে কোনো কোনো ট্রলারে। মুহূর্তে কথাবার্তা, গান, হাসি-ঠাট্টায় সরগরম হয়ে ওঠে চারপাশ।
পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার ফেরীঘাট থেকে আমখোলা ইউনিয়ন নদী ধরে হরিদেপুর পর্যন্ত বিস্তৃত এমন চিত্রে চোখ আটকে যাবে। গ্রীষ্ম মৌসুমে এভাবেই থাকে বলে জানালেন মুশুরিকাঠির ঘাটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ।ব্যবসায়ীরা জানান ,
‘তয় এই সিজনে মানসের আনাগোনা বেশি। এবার তো তরমুজের ব্যমালা (অধিক) ফলন হইছে। দুপুরের পর থেইকা তরমুজ লোড-আনলোড শুরু হয়। রাইত ৯টা-১০টা বাইজ্জা যায়।’ চায়ের কাপে চিনি দিতে দিতে বলেন তিনি।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চাষিরা বলেন, পারিবারিকভাবেই ব্যাবসা তরমুজ চাষ। পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। কিছু দাদন ছিল বিধায় বরিশালে এসেছি। নয়তো ভোলা থেকে পটুয়াখালীর যে কোনো উপজেলায় গিয়া বিক্রি করে দিতাম। ওখানে ভালো পাইকার পাওয়া যায়। এখনো মৌসুমের তরমুজ তোলা শুরু হয়নি। আগাম জাতের তরমুজে বেশ দাম পাচ্ছি। ঝড়-বন্যা না হলে এবার লাভ হবে।
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালাইয়া থেকে এসেছেন কিছু চাষিরা তারা বলেন, গত বছর ঝড়-বন্যাছাড়াই তরমুজ গাছ মরে গিয়েছিল। এ বছর গাছ ভালো ছিল, ফলনও ভালো হয়েছে। ৮ হাজার পিস তরমুজ নিয়ে এসেছি। ১৬ থেকে ২৪ হাজার টাকা দামে বিক্রি করেছি। অর্থাৎ আকার অনুসারে প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ১৬ থেকে ২৪ হাজার টাকা দামে বিক্রি করেছি।
মৌসুমের আগেই আগাম জাতের তরমুজের ভালো মূল্য ইতিবাচক বলে মনে করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উদ্যান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের সোনালি শস্য হচ্ছে তরমুজ। সারা দেশের দুই তৃতীয়াংশ তরমুজ উৎপাদন হয় এই বিভাগে। কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর এই অর্থকরী ফসলের চাষিদের পাশে রয়েছে। আমরা চাই কৃষক লাভবান হোক। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায়, অনেক কৃষক বাজার সিন্ডকেটের কারণে চাষ ছেড়ে দিচ্ছেন। এমন অনেক কৃষক আমাকে জানিয়েছেন, মধ্যস্বত্ত্বভোগী বিশেষ করে আড়ৎদারদের সিন্ডিকেটের কবলে পরে ভালো ফলন হলেও তারা মুনাফা তুলতে পারেনি। আমি মনে করি, বাজার ব্যবস্থা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো তারতম্য হচ্ছে কিনা তা দেখা দরকার।
৪০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য
এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৬ হাজার ২০৭ হেক্টর জমিতে চাষ বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল। ২০২৩-২৪ মৌসুমে বরিশাল বিভাগে আবাদ হয়েছিল ৪৮ হাজার ৪৭ হেক্টর জমি। চলতি মৌসুমে (২০২৪-২৫) চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৫৫১ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে আবাদের হার নির্ণীত হয়েছে ১১২.৪৭ শতাংশ।