বাগেরহাটের বাদোখালী বিল। এক সময়কার আয়ের উৎস এখন স্থানীয়দের গলার কাঁটা যেন। বর্ষা মৌসুমের পুরোটাই লেগে থাকে জলাবদ্ধতা। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে পানি নামতে না পেরে ঘেরের মাছ যেমন ভেসে যায়, তেমনি পাড়ের ফসলও পচে যায়। শুকনো মৌসুমেও থাকে ব্যাপক পানির সংকট।
স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুজ্জামানের ৪ একর জমি রয়েছে এ বিলে। এ জমিতে করা মাছের ঘের ও ঘেরের পাড়ের ফসলের আয়েই সংসার চলে তার। এ বছরও দুবার ঘেরের পাড়ের ফসল পচে গেছে এবং মাছ ভেসে গেছে। বিলের ভেতর দিয়ে যাওয়া ছোট-বড় খালগুলো দখল করে মাছ চাষ করা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪টি স্লুইজ গেট নষ্ট থাকা এবং পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় পুরো বর্ষা মৌসুমই জলাবদ্ধ থাকে এ বিল ও আশপাশের এলাকা।
শুধু মনিরুজ্জামান নয়, বাদোখালী বিলের অসংখ্য জমির মালিক ও মাছ চাষি প্রতিবছরই ক্ষতিগ্রস্ত হন জলাবদ্ধতার কারণে।
জানা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগম্বুজ, কাড়াপাড়া ও যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৭ হাজার একর জমি নিয়ে এ বাদোখালী বিল। এটি এ এলাকার সব থেকে বড় বিল। ১৩টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এ বিলের ওপর নির্ভরশীল। বিলে ছোট-বড় ২০টির বেশি খাল আছে। খালগুলোর কিছু কিছু অংশ প্রভাবশালীরা দখল করে মাছ চাষ করছেন। আর অবশিষ্ট অংশে খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা নেট-পাটা, বোঁটা ও কুমোড় (পানির নিচে এক সাথে গাছের্ অনেক ডাল পুতো দিয়ে মাছ ধরার বিশেষ উপায়) দিয়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছেন। এছাড়া বিলের পানি নামার জন্য বিভিন্ন খালের মুখে থাকা ৪টি স্লুইজ গেট নষ্ট থাকায় ঠিকমতো পানি নামতে পারে না। এজন্যই জলাবদ্ধতার অভিশাপে ভোগেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।
শেখ হারুণ অর রশীদ নামের এক কৃষক বলেন, বাদোখালী বিলকে কেন্দ্র করে এই যে জলাবদ্ধতা; তা একসময় ছিল না। কিন্তু খালগুলো দখল হয়ে যাওয়া এবং নাব্য হারানোর ফলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। স্লুইজগেট ৪টিকে সচল এবং খালগুলো দখলমুক্ত করে খনন করলে এই জলাবদ্ধতা থাকবে না। শুকনো মৌসুমেও চাষাবাদে পর্যাপ্ত পানি পাবে এলাকাবাসী। এসব সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এদিকে, জমির মালিক ও স্থানীয়দের দুঃখ দুর্দশার বিষয় জানতে এবং জলাবদ্ধতার সমাধান খুঁজতে সম্প্রতি বাদোখালী বিল এবং বিলসংলগ্ন খালের মুখে থাকা অকেজো স্লুইজগেটগুলো পরিদর্শন করেছেন পরিবেশকর্মীরা।
গত রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনার এবং বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সদস্যরা এই বিল পরিদর্শন করেন। স্থানীয়দের দুঃখ দুর্দশার গল্প শোনেন তারা।
এ সময় পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনার সভাপতি খুদরত-ই-খুদা, সদস্য অজন্তা দাস, এমডি জাহাঙ্গীর হোসেন, বাগেরহাট পরিবেশ সুরক্ষা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোল্লা নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান লিটন, কার্যকরী সদস্য শেখ আব্দুল গনিসহ স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন। বাদোখালী বিলের সমস্যা সমাধানে কাজ করার আশ্বাস দেন পরিবেশকর্মীরা। খালগুলো অবমুক্ত করতে পানি উন্নয়নবোর্ডসহ সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দেয়ার কথাও জানান তারা।
পরিবেশ সুরক্ষা মঞ্চ খুলনার সভাপতি খুদরত-ই-খুদা বলেন, বাদোখালী বিল একটা বড় জায়গা। এভাবে বছরের পর বছর জলাবদ্ধ থাকলে এই এলাকার মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে; তেমনি স্থানীয় বাস্তুসংস্থানও ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বিরুনী বলেন, জেলায় বেশকিছু স্লুইজ গেট অচল রয়েছে। এগুলো সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্লুইজগেটগুলো মেরামত করা হবে।