
তিনদিন পানিবন্দি থেকে বাসিন্দারা ছুটছেন আশ্রয়ের খোঁজে। ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর ভারি বর্ষণের পর তীব্র স্রোতে হু হু করে লোকালয়েও পানি ঢুকছে। তলিয়ে গেছে বসতঘর ও রান্নাঘর এমনকি শৌচাগারও। দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। ত্রাণ সহায়তাও মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উঁচু একটি ঘরে কোনোরকমে আশ্রয় নিয়েছে উপজেলার শালকোনা এলাকার নারী ও শিশুসহ কয়েকটি পরিবার। তাতে জুটছে না খাবার, যেতে পারছেন না শৌচাগারেও। তিনদিন পানিবন্দি থেকে অনেকে আবার ছুটছেন আশ্রয়ের খোঁজে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শুধু শালকোনা এলাকা নয়, এমন ভয়াবহ অবস্থায় পুরো ধোবাউড়ায়। সবচেয়ে নাজুক উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, পোড়াকান্দুলিয়া, গামারিতলা, বাঘবেড় ইউনিয়নের গ্রামগুলোর। পানি বেড়েছে সব নিচু এলাকায়।
একই অবস্থা হালুয়াঘাট উপজেলার গাজিরভিড়া, ভবনকুড়া ও কৈচাপুরসহ নিচু এলাকাগুলোর। জলাবদ্ধতা রয়েছে পৌর সদরেও।
পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে রোববার অবনতি হয় এ দুই উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি। পানিবন্দি রয়েছেন লাখো মানুষ। ফসলি জমি ও মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা কৃষক ও ঘের মালিকরা।
এদিকে, বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। নৌকার অভাবে আশ্রয়কেন্দ্রও আসতে পারছেন না দুর্গত মানুষ। ত্রাণ সহায়তাও মিলছে না বলে অভিযোগ তাদের।
আয়েশা খাতুন নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘বাড়িতে একলগে ১০টা ঘর, এর মধ্যে ৯টাতেই পানি উইঠ্যা গেছে। একটাতে সবাই মিইল্যা আইয়া উঠছি। টয়লেটও ডুইব্যা গেছে, বাইরে যে যামু হেই বাউও নাই। নাওয়া নাই, খাওয়া নাই -- এ অবস্থার মধ্যে আছি। কেউ খোঁজখবর নিছে না এহনো।’
রিকশাচালক গোলাপ মিয়া (৪৮) স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকতেন দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া পাড়া গ্রামে।
তিনি জানান, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে হঠাৎ বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে ভেঙে নিয়ে যায় একটি ঘর। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় মসজিদে। সেই মসজিদে তিনি ছাড়া আরও ১২টির মতো পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। সকালে একমুঠো মুড়ি খেয়েছিলেন, সারাদিন আর কোনো খাবার নেই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, স্বাধীনতার পর ১৯৮৮ সালের বন্যাকে সবচেয়ে ভয়াবহ মনে করা হতো। কিন্তু এবারের পানি সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি উপজেলাবাসী। ঘরের মধ্যে পানি থাকায় নেই রান্নাবান্না। এতে শুকনো খাবার খেয়ে দিন চলছে। অনেকে খাবারের জন্য হাহাকার করছে। শুক্রবার রাত ৮টা থেকেই ঘরের মধ্যে পানি ঢোকে। অনেকে খাটের ওপর বসে রাত কাটিয়েছেন; অনেকে রাস্তায়।
ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে সব ধরনের সহায়তা পৌঁছে দিতে প্রশাসন কাজ করছে। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সম্মিলিতভাবে তাদের পাশে থাকতে হবে।’