দখল, চাঁদাবাজি-সংঘর্ষ বেড়েছে নেত্রকোনায়

দখল, চাঁদাবাজি-সংঘর্ষ বেড়েছে নেত্রকোনায়

মোহনগঞ্জ আদর্শনগর দখল করে বিএনপি কার্যালয় ও দুর্গাপুরে আদিবাসীর বাড়ি ভাঙচুর।

প্রকাশিত

গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর থেকে নেত্রকোনার সীমান্ত উপজেলা থেকে হাওড় উপজেলার সর্বত্র চলছে দখল বাণিজ্য। ঘটছে হামলা, সংঘর্ষের ঘটনা। চাঁদাবাজি, চুরি ছিনতাই বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। পুলিশের ভূমিকা নীরব দর্শকের মতো হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হচ্ছে সেনাবহিনীকে।

অভিযোগ রয়েছে, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করেই বিএনপির স্থানীয় কতিপয় নেতাকার্মীর একাংশ চাঁদাবাজ, দখলবাজিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি দখলকে কেন্দ্র করে কোথাও কোথাও ঘটছে সংঘর্ষ। 


যদিও শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা বিএনপি। অভিযোগ উঠেছে, মুক্তিযোদ্ধার দোকান দখল করে বিএনপি কার্যালয় স্থাপনেরও। 

স্থানীয়, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বিভিন্ন স্থানে জোরপূর্বক বাজার, জলমহাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলে নেয়ার অভিযোগ উঠছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। তারমধ্যে বেশ কটি বিষয় সবার নজরে এসেছে। কেন্দুয়ায় দোকান দখল নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশত আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনী। এতে বিব্রত বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাকার্মীরা। 


সীমান্ত উপজেলা দুর্গাপুরের কালিকাপুরে পাহাড়ে একটি আদিবাসী বাড়ি ভাঙচুর করে নিজেদের দাবি করা হয়েছে।


অন্যদিকে জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার আদর্শ নগর বাজারটি বিএনপি দখলে নেয়ার বিষয়ে সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সুয়াইর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোস্তফা জামিল, ইউপি সদস্য হারেস মিয়া ও স্বপন মিয়া।


লিখিত অভিযোগে তারা জানান, সরকার পতনের পর আদর্শ নগর বাজারে লুটপাট দখল অব্যাহত রয়েছে। এখন থেকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সব ধরনের কাজ বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই করতে হবে। এমনকি ইউনিয়নে আটটি টিউবওয়েল বরাদ্দ এলেও ইতিমধ্যেই চারটি বিএনপি নেতাকর্মীরা দখলে নিয়েছেন। 

যদিও জোর করে নয়, টাকা দিয়েই বাজার থেকে বিদায় করা হয়েছে আগের বাজার সংশ্লিষ্টদের বলছেন সোয়াইর ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব জামাল মিয়া।


তিনি বলেন, সরকার পতনের পর এমনিতেই আত্মগোপনে গিয়েছে বাজার খাস কালেকশনকারী সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তীতে তাদের প্রস্তাবেই টাকা দিয়ে বাজার দখলে নিয়েছেন তারা। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কোনো অভিযোগ নেই এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি মহল।


এছাড়াও সুয়াইর ইউনিয়নের পালগাঁও বাজারে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছে ক্লাব ঘরের নামে দখলকৃত জায়গা দীর্ঘদিন আগে বিক্রি করলেও সরকার পতনের পর পুনরায় দখল করে বিএনপির কার্যালয় বানানো হয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন মুক্তিযোদ্ধা মিনহাজ উদ্দিন দুলাল।


তার অভিযোগ, দীর্ঘদিন আগে জায়গাটি কিনে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ সরকার পতনের পর জোরপূর্বক দোকান ঘরটি দখলে নিয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতারা। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করছেন দখলকারীরা। দোকান দখলদার হুমায়ুন, মাহমুদুর রহমান কায়সারসহ একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, আগে থেকেই এখানে বিএনপির অফিস ছিল। পরবর্তীতে বিক্রি করলেও এখন আবারও অফিস করা হয়েছে।


তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়েছেন জেলা বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক এস এম মনিরুজ্জান দুদু। 

তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্পষ্ট নির্দেশনা বাস্তবায়নে তৃণমূলে কাজ করছে জেলা বিএনপি। কারোর বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ উঠলেই ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।


এদিকে মুক্তিযোদ্ধার দোকান ও বাজার দখলের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস। 

তিনি জানান, বিভিন্ন স্থানের অভিযোগগুলো আসার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশকে অবগত করা হচ্ছে। সেই সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে ঘটনাগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার। সম্প্রতি কেন্দুয়ায় দোকান দখলকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও পরবর্তীতে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে এনেছে।


অন্যদিকে শান্তিপ্রিয় স্থানীয়রা বলছেন, সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা বেশ অবনতি হয়েছে। স্বাভাবিক রাখতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া দখল, ভাঙচুর ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাগুলোতে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অতি জরুরি।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com