গাইবান্ধায় ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত

গাইবান্ধায় ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত
প্রকাশিত

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিশামত গ্রামের সাতজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। এর আগে ওই উপজেলায় আরো চারজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ ধরা পড়ে।

এনিয়ে আজ শনিবার (৪ অক্টোবর) পর্যন্ত উপজেলার মোট ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। আক্রান্ত সবাই গবাদিপশু কাটাকাটির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার রাতে গাইবান্ধা শহরের রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোম হসপিটালের চর্মরোগবিশেষজ্ঞ মনজুরুল করিমের কাছে চিকিৎসা নিতে এসে নতুন সাতজনের মধ্যে এই উপসর্গ ধরা পড়ে। 

রাবেয়া ক্লিনিক অ্যান্ড হোমের একজন কর্মী সাইদুর রহমান গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, 'আমাদের এখানে প্রতি শুক্রবার স্কিন স্পেশালিস্ট মনজুরুল করিম চেম্বার করেন। গতকাল স্যারের চেম্বারে আসা কিশামত গ্রামের ৭ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত হয়। চিকিৎসা নিয়ে রোগীরা বাড়ি ফিরে গেছেন।'

সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাফিজার রহমান গণমাধ্যমকে জানান, 'গত ২৯ সেপ্টেম্বর কিশামত গ্রামের একটি রোগাক্রান্ত গরু স্থানীয়রা জবাই করে মাংস কাটাকাটি করেন। ওই ১১ জন এ কাজে যুক্ত ছিলেন। চারদিন পর গত বৃহস্পতিবার তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা দেখা দেয়, এবং মাংসে পচন ধরতে শুরু করে। বিশেষ করে হাত, নাক, মুখ ও চোখে এসব উপসর্গ দেখা গেছে। আক্রান্তদের মধ্য অন্তত ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি আছে।'

নতুন আক্রান্ত ৭ জনসহ এ বছর রংপুর বিভাগে ১৮ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হলো।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, অ্যানথ্রাক্স একটি মারাত্মক প্রাণিবাহিত (জুনোটিক) রোগ, যা বাংলাদেশে মানুষ ও পশু উভয়ের জন্যই মারাত্মক হুমকি হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে।

এ রোগ মূলত গবাদিপশু এবং তৃণভোজী বন্যপ্রাণীর মধ্যে ছড়ায়। এ রোগে আক্রান্ত গবাদিপশুর প্রায়ই প্রাণহানি হয়। এই রোগে আক্রান্ত পশুর সংস্পর্শে আসা, দূষিত চামড়া, হাড় বা পশম নাড়াচাড়া করা, কাঁচা বা পুরোপুরি রান্না না করা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু শরীরে প্রবেশের পর লক্ষণ প্রকাশের সময়কাল (ইনকিউবেশন পিরিয়ড) ১ থেকে ২০ দিন। যদিও মানুষের মধ্যে এর সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম, তবে দেরিতে রোগ নির্ণয় হলে তা মারাত্মক হতে পারে।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আহমেদ নওশের আলম গণমাধ্যমকে বলেন, 'অসুস্থ গরু বা ছাগল জবাই করলে অ্যানথ্রাক্স ছড়াতে পারে। সবার প্রতি আমাদের পরামর্শ হলো, অসুস্থ পশু জবাই করবেন না এবং সেগুলোর সংস্পর্শে আসবেন না। এটা ভয়ের নয়, বরং সতর্কতার বিষয়। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।'

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আইইডিসিআরের সাবেক উপদেষ্টা ড. এম. মুশতাক হোসেনও গণমাধ্যমকে বলেন, 'অ্যানথ্রাক্স থেকে নিরাপদ থাকতে হলে অসুস্থ গরু, ছাগল বা অন্য কোনো গবাদিপশু জবাই করা যাবে না। তাদের চিকিৎসা করাতে হবে; মারা গেলে মাটিতে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। কোনো অবস্থাতেই মৃত পশুকে খাল বা জলাশয়ে ফেলা যাবে না।'

অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, অনেকটা ক্ষতের মতো দেখতে গোলাকার ফুসকুড়ি, কখনও কখনও চুলকানি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিবায়োটিক ও লোশনের মাধ্যমে এর চিকিৎসা পাওয়া যায়। তাই বিশেষজ্ঞরা আতঙ্কিত হওয়ার চেয়ে সতর্কতার ওপরই বেশি জোর দিচ্ছেন।

আইইডিসিআর জানিয়েছে, রংপুরে এবারই প্রথম অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হলো। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বর্তমানে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে পশুদের টিকা দিচ্ছে।

আইইডিসিআরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্স এন্ডেমিক রোগ। ২০১০ সাল থেকে প্রতি বছরই বিক্ষিপ্তভাবে এর প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়। আগের প্রাদুর্ভাবের তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে আইইডিসিআর পাঁচ জেলার—সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী—নয়টি উপজেলায় সক্রিয় অ্যানথ্রাক্স নজরদারি কার্যক্রম শুরু করে।

আরো পড়ুন

No stories found.
logo
The Metro TV | দ্য মেট্রো টিভি | The Metro TV Bangladesh | Bangla News Today | themetrotv.com |The Metro TV News
themetrotv.com