এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও জেলা দায়রাজজ আদালত আদালতে। কাঙ্ক্ষিত সময়ে বিচারিক কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় ৮ থেকে ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে আদালত চত্বরে ঘুরতে হচ্ছে বিচার প্রত্যাশীদের। তবে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শূন্য পদগুলোতে দ্রুত বিচারক নিয়োগের দাবি আইনজীবীসহ স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা বলছেন, আদালতের মাধ্যমে বিচারিক সহায়তা পেতে পঞ্চগড়বাসীর একমাত্র ভরসার স্থান পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও জেলা দায়রাজজ আদালত। কিন্তু আদালতগুলোতে নতুন নিয়োগ না হওয়ায় বিচারক সংকটে বছরের পর বছর চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বিচার প্রার্থীরা।
জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার বাসিন্দা শাহা আলী সময় সংবাদকে বলেন, ‘জমির একটি মামলায় আমি গত ১৪ বছর ধরে আদালত চত্বরে ঘুরতেছি। কিন্তু কোনো সমাধান হচ্ছে না। আজ আছে তো, কাল বিচার নাই। একের পর এক তারিখ দিচ্ছে। আজকে তারিখ ছিল, এখন আদালতে এসে দেখি বিচারক নাই। এতে করে আমাদের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।’
একই কথা বলেন পঞ্চগড় সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘২০০৮ সাল থেকে এই আদালতে যাওয়া আশা আমার। আদালতের তারিখ দেখতে দেখতে সব শেষ করে ফেলেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা পাচ্ছি না।’
বোদা উপজেলার সাকোয়া বাজারের আলমগীর হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমার বোনের একটি যৌতুক মামলা রয়েছে। গত ৪ বছর ধরে আদালতের কোন সুরাহা পাচ্ছি না। আদালতে আসলে বলছে বিচারক না থাকায় নতুন তারিখ ফালানো হচ্ছে। তা ফোনে জানানো হবে। আমরা প্রায় নিঃশ্ব হয়ে গেছি। জানি না আরও কতদিন এভাবে মামলার তারিখ নিয়ে ঝুঁলতে হবে।’
পঞ্চগড় আদালতের আইজীবী অ্যাড. আল আমিন ও হাবিব আল আমিন ফেরদৌস সময় সংবাদকে বলেন, ‘চিফ জুডিশিয়াল আদালতের ৯টি আদালতের মধ্যে ৪টিতে বিচারক না থাকায় বিচার প্রার্থী মানুষ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিচারক সংকটের কারণে তাদের এসে দিনের পর দিন তারিখ নিয়ে চলে যেতে হচ্ছে। আর এই সমস্যা সমাধান হলে পঞ্চগড় জেলার মানুষ অনেকটাই উপকৃত হবে। আদালতের যে কয়েকটি বিচারকের পদ শূন্য আছে। সেগুলো যদি পূরণ হয় তাহলে আদালতের কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি পাবে।’
আরক আইজবীবী মোস্তফা কামাল সময় সংবাদকে বলেন, ‘যারা বিচার প্রত্যাশী মানুষ, তারা আদালতে নিয়মিত আসছেন। কিন্তু তাদের ভোগান্তি বাড়ছে। সারাদেশে যেমন সংস্কার চলছে, আমরা চাই আদালতের বিচারকের এই শূন্য পদগুলোতে বিচারক নিয়োগ করা হোক। এতে করে ভোগান্তি কমে গিয়ে দ্রুত মানুষ বিচারিক সেবা পাবে।’
পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রেকর্ড কিপার ও ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোছা. হুসনেয়ারা বেগম সময় সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমানে আদালতের যে কার্যক্রম চলছে তাতে দেখা গেছে, বিচারক সংকট থাকায় কাজে সবাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের এই আদালতের ৯ জন বিচারকের মধ্যে আছে মাত্র ৫ জন। এই ৫ জন বিচারক কয়েক পর্যায়ে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এতে কার্যক্রমে একটা ধীরগতি এসেছে। মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে মামলার জটলা। আমরাও চাই এ সকল শূন্য পদে বিচারক আসুক, এবং আদালতের গতি ও কার্যক্রম আরও বাড়ুক।’
আদালতের সূত্র বলছে, জেলার দায়রাজজ আদালতের ১০টি আদালতে বিচারক রয়েছেন ৯ জন। আর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৯টি আদালতে বিচারক রয়েছেন ৫ জন।