
ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের মানব পাচারকারী চক্র ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চক্রটি কয়েক বছর আগের সেই ভয়াল রূপে ফিরে এসেছে।
সশস্ত্র পাচারকারী চক্রের কারণে দেশের সীমান্ত এলাকা টেকনাফ হয়ে উঠেছে এখন আতংকের জনপদ।
উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া নেওয়ার কথা বলে টেকনাফের বন্দিশালায় আটকে মুক্তিপণ আদায় করছে চক্রটি।
তাদের খপ্পরে পড়ে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের ১১ যুবক।
এদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে মঙ্গলবার রহমত উল্লাহ নামের একজন প্রাণ হারান। গতকাল বুধবার নিহত রহমত উল্লাহর দাফনকাজ শেষ হয়।অপর একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রাণ নিয়ে ফিরে আসতে পারা ৯ জন জানিয়েছেন, বন্দিশালায় তাদের আটক রাখা হয়েছিল, তাদের অপহরণ করে নির্যাতন করে মুক্তিপণ দাবি ও আদায় করে। সেখানে আরো অর্ধশতাধিক লোক বন্দী রয়েছেন।
পাচারকারীদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরে আসা ভুক্তভোগীরা জানান, দালাল চক্রের অন্যতম সদস্য রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়ার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর তাদের ১১ জনের দলকে নিয়ে যায় টেকনাফে। পথিমধ্যে ১১ জনকে এক দফায় উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা পালং এলাকার দালাল সাগরের কাছে বিক্রি করে দেয়। দ্বিতীয় দফায় হাফেজ সাইদুর রহমান নামের অপর এক দালালের কাছেও বিক্রি করা হয় তাদের। এরপর টেকনাফের বন্দিশালায় তাদের স্থান হয়। সেখানে একটি ঘরে তাদের আটকে রেখে করা হয় নির্যাতন।
ভুক্তভোগীরা বলেন, তাদের সাথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রতারণা করা হচ্ছে এটা বুঝতে পেরে সেই বন্দিশালার জানালার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে আসেন তারা। পালাতে গিয়ে দালাল চক্রের কাছে ধরা পড়েন রহমতুল্লাহ ও নবী আলম। দালাল চক্রের পিটুনিতে গুরুতর আহত রহমতুল্লাহ মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে মারা যান। আর নবী আলম এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। তাকে ফিরিয়ে দিতে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে পাচারকারীরা।
গত মঙ্গলবার টেকনাফ সীমান্তের মানবপাচারকারী চক্রের একজন উচ্চ পর্যায়ের সদস্যকে আটক করেছে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানান, মানবপাচারের ৩টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী কেফায়েতুল্লাহ কেরানীগঞ্জে আত্মগোপনে ছিলেন। তাকে আটকের পরে কক্সবাজারে নিয়ে আসা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, সাম্প্রতিক সময়ে টেকনাফে মানব পাচারের ঘটনা বেড়ে গেছে। শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকায় পাচারকারীরা এ সময়কে পাচারের জন্য বেছে নেয়। মানবপাচারের আড়ালে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনার কথাও তিনি স্বীকার করেন।