দেশ

উত্তরের চা শিল্পে নতুন মৌসুমে আশার আলো দেখছেন চাষিরা

উত্তরের চা শিল্পে নতুন মৌসুমে স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা, কম উৎপাদন হলেও আশা রয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের চা শিল্পে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে উত্তরের পাঁচটি জেলা—পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী এবং লালমনিরহাট। এই অঞ্চলটি সিলেট-চট্টগ্রামের পর চায়ের তৃতীয় বৃহত্তম উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। তবে গত মৌসুমে নানা কারণে চাষিরা চায়ের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে গত খরাপীড়িত মৌসুমে চায়ের উৎপাদন কমে গেছে। তবুও, নতুন মৌসুমে চা চাষিরা নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন।

এ বছর উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার সমতলে চায়ের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার কেজি কমেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে উৎপাদিত চা আগের মৌসুমের চেয়ে ৩৫ লাখ কেজিরও বেশি কম। গত মৌসুমে জাতীয় উৎপাদনের ১৭.৪৪ শতাংশ চা সমতল ভূমি থেকে আসলেও, এবার তা কমে ১৫.৪৭ শতাংশে নেমে এসেছে।

চায়ের উৎপাদন কমে যাওয়ার মূল কারণ হিসেবে জানা গেছে, খরার কারণে চাষিরা বাগান পরিচর্যায় আগ্রহী ছিলেন না। অনেক চাষি হতাশ হয়ে বাগান ছেড়ে দিয়েছে বা সেগুলি নষ্ট করে ফেলেছে। এছাড়া, কাঁচা চা পাতার মূল্য না পাওয়ার কারণে চাষিরা তাদের পরিশ্রমের ফল ঠিকমতো পায়নি। গত মৌসুমে চা-পাতার দাম ছিল সরকারিভাবে ১৭ টাকা, কিন্তু নতুন মৌসুমে সেই দাম নির্ধারণ না হওয়ায় চাষিরা যথাযথ দাম না পেয়ে উদ্বিগ্ন।

তবে, নতুন মৌসুমে চাষিরা তাদের স্বপ্ন পুনরুজ্জীবিত করছেন। পহেলা মার্চ থেকে শুরু হওয়া চা-পাতা আহরণের মৌসুমে চা-পাতা সংগ্রহ করতে শুরু করেছে কারখানাগুলো, কিন্তু নতুন দাম নির্ধারণের ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। চাষিরা আশা করছেন, এবার তারা তাদের চা-পাতার ন্যায্য মূল্য পাবেন এবং দাম বৃদ্ধির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এদিকে, পঞ্চগড়ে ২৮টি এবং ঠাকুরগাঁওয়ে একটি চা-পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা রয়েছে। চা বোর্ড পঞ্চগড়ে চা শিল্পকে আরও গতিশীল করার জন্য 'টি সফট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন' তৈরি করেছে, যা চাষিদের সুবিধার্থে চালু করা হয়েছে। চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান জানান, "গত মৌসুমে পঞ্চগড়ে ১ কোটি ৭৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছিল, কিন্তু চলতি মৌসুমে তা কমেছে।" তিনি আরও জানান, চায়ের মান উন্নত করার জন্য সরকার ও চা বোর্ড একযোগে কাজ করছে এবং আশা করা হচ্ছে, নতুন মৌসুমে চাষিরা ভালো দাম পাবেন।

উত্তরের চা শিল্পের সমৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সংকট সমাধানে কাজ করছে। নতুন মৌসুমে চা চাষিদের আশার আলো দেখছে এবং তারা আরও ভাল মানের চা উৎপাদন করতে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন।