সংলাপে বক্তব্য দিচ্ছেনআসিফ নজরুল।
আগামী বছর বিজয় দিবস অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫-এর আগে জুলাই গণহত্যার বিচার শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, বিচারকার্য সম্পন্ন করে বিজয় উদযাপন করা হবে।
শনিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে সংস্কার নিয়ে জাতীয় সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
কি কারনে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়ায় ধীর গতি তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘আমি যখন সরকারে ছিলাম না, তখন আমিও বলতাম, এটা হচ্ছে না কেন, ওটা হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নগুলো থাকা উচিত। থাকলে আমরা উত্তরটা পাই। আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, আইন উপদেষ্টা হিসেবে আমার প্রধানতম দায়িত্ব হচ্ছে এই গণহত্যার বিচার করা। কিন্তু বিচারটা করার সময় আমাকে গ্রহণযোগ্য মাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য সময় লাগছে।’
শনিবার ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপের দ্বিতীয় দিনে ‘গুম-খুন থেকে জুলাই গণহত্যা: বিচারের চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামের আলোচনায় আইন উপদেষ্টা এই ব্যাখ্যা দেন।
এর আগে ওই আলোচনায় গণ-অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছর সময়কালে গুম-খুন ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে গণহত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সকল ঘটনার বিচারে ধীরগতির অভিযোগ উঠে। এসময় ভুক্তভোগীরা তাঁদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এবং বিচারকার্য ত্বরান্বিত করতে দাবী তুলেন।
অভিযোগের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘কিছুই রেডি ছিল না। বিচার যে ভবনে হবে, সেই ভবন রেডি ছিল না, বিচারক ছিল না, প্রসিকিউটর টিম ছিল না, ইনভেস্টিগেশন টিম রেডি ছিল না, শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রসিকিউটর টিম করা হয়েছে। এর চেয়ে দ্রুত কি করা যায়? সাত দিনের মধ্যে বলেছিলাম, জুলাই-আগস্টের মিথ্যা মামলা সাত দিনের মধ্যে উইথড্র করা হবে। সেখানে ১০ দিন লেগেছে।’
ত্রুটিহীন বিচার প্রক্রিয়ার চ্যালেঞ্জ তুলে ধরতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা জানেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার প্রচুর টাকা আছে, লবিং ক্যাপাসিটি আছে, শত্রুভাবাপন্ন দেশ আছে। তাই এমনভাবে বিচার করতে হবে, যা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠতে না পারে। প্রশ্ন তারা তুলবেই। কিন্তু প্রশ্নটা যেন কোনোভাবে যৌক্তিক না হয় সেই চেষ্টাটা করতে হবে। আমাদের ডিউ প্রসেস (সঠিক প্রক্রিয়া) রাখতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের যে প্রসিকিউটর টিম আছে, ইনভেস্টিগেশন টিম আছে, সেখানে আমার আস্থা আছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সবার মনে হতে পারে বিচারটা এত দেরি হচ্ছে কেন? আমি আমার চিফ প্রসিকিউটরকে বললাম, বিচার দেরি হচ্ছে কেন? তাজুল (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম) আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলছে, কোথায় দেরি হচ্ছে? শুনানির জন্য এক মাস সময় দেয়া হলো? এখানে তো তিন মাস সময় দেওয়ার কথা। এর আগে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের যে বিচার হচ্ছিল, সেখানে তো তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। সেখানে এক মাস দিয়েছি।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে দেখি বলে, যাদের হাজির করা হচ্ছে তাদের হাতে হাতকড়া নেই, হাসিখুশি মুখে হাজির হচ্ছে। তখন তাজুল আমাকে বলে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাদেরও কারও হাতকড়া পরানো হয়নি। সে-ই তো জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের আইনজীবী ছিল। অনেক জিনিস আমাদের স্মরণে থাকে না, আমরা ইম্পেশেন্ট (অধৈর্য) হয়ে যাই। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারাক্ষণ আমার মনে হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তিনটা লক্ষ্য আছে—বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। বিচারটা মূলত আমাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব, এখানে কোনো রকম কোনো গাফিলতি হচ্ছে না, হবে না।’
আলোচনা সভায় গুমের শিকার তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের নেতা কাজী সাইফুল অভিযোগ করেন, গুম ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের অধিকাংশই এখনো বহাল তবিয়তে। বড়জোর বদলি করা হয়েছে। প্রশাসনের নির্যাতনকারী কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
এ সময় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘ছাত্রদলের ছয় শতাধিক নেতাকর্মী গুম হয়েছেন। কাউন্টার টেররিজম ছিল ছাত্রলীগের একটা ইউনিট। আর কত সময় গেলে তাদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নেবেন? শুধু ট্রাইব্যুনালের জন্য তো বসে থাকলে হবে না। এর আগের প্রক্রিয়ায় তো দৃশ্যমান অগ্রগতি নাই।’
আইন উপদেষ্টার আগে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ের নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরেন।