যশোরে ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য রাখছেন মিজানুর রহমান আজহারী
কথায় আছে ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী।’ সেই প্রবাদ বাক্যই যেন সত্যে পরিণিত হলো আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে। ওয়াজ মাহফিল ধর্মীয় বয়ানের জায়গা। অথচ সেখানে এসেই এসে কেউ খুঁইয়েছেন সোনার গয়না। কেউ বা মুঠোফোন ফোন। এ ব্যাপারে গত তিন দিনে যশোর থানায় কোতোয়ালি থানায় প্রায় ৫০০টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।
গত বুধবার, বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে শহরতলি পুলেরহাটের আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে এ ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আলোচিত এই ওয়াজ মাহফিলে মিজানুর রহমান আজহারী, আহমাদুল্লাহসহ কয়েকজন ইসলামী বক্তা রাতভর ‘নসিহত’ করেছেন। কিন্তু কোনো ‘নসিহত’ কাজে আসে নাই। চোর তার কাজ ঠিকই করেছে।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শারমিন আক্তার বলেন, তিন দিনের ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিয়ে অসংখ্য মানুষের মুঠোফোন ও সোনার গয়না হারিয়ে গেছে। এ ঘটনায় গত তিন দিনে ৫০০টির মতো জিডি হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরতলি পুলেরহাটের আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এদিন রাতে বক্তব্য রাখেন খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজাহারী ও আস–সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আহমাদুল্লাহ। তাঁদের আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে সমগ্র মাহফিল এলাকায়। রাত সাড়ে ১০টার পর মাহফিল শেষ হলে পদদলিত একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এ ছাড়া মুঠোফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে গেছে।
হাসপাতাল ও থানা সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে পদদলিত হয়ে ২১ জন ভর্তি হয়। এর মধ্যে রাতেই ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়াতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার বেলা তিনটা পর্যন্ত সোনার গয়না ও মুঠোফোন হারানোর ঘটনায় ৫০০টির বেশি জিডি হয়েছে।
মায়ের দেড় ভরি ওজনের একটি গলার চেইন খোয়া যাওয়ার পর শনিবার দুপুরে জিডি করতে রূপদিয়া থেকে কোতোয়ালি থানায় আসেন ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। একপর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন তাঁর গলায় হার নেই। তাই থানায় জিডি করতে এসেছি।’
স্ত্রীর গলার চেইন হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করতে আসেন শহরতলির নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হজরত হোসেন। তিনি বলেন, এভাবে ওয়াজ মাহফিলে চুরি হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক এবং অপরাধমূলক কাজ। লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে গতকাল। চোররাও এ ধরনের অনুষ্ঠানে সুযোগটা কাজে লাগায়। কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক ও ব্যবস্থাপনা ভালো করা উচিত ছিল।
শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘যশোরের ইতিহাসে এমন বড় মাহফিল হয়নি। ওয়াজ মাহফিলে গেছিলাম ইমান–আমল ঠিক করতে। আর চোরেরা তাদের ব্যবসা খুঁজে নিল। হাজার হাজার মানুষের মুঠোফোন হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি মাহফিলের মাঠেই। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসেছে, তাই জিডি করতে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি করতে পারছে না। যারা চুরির মতো এ ধরনের কাজ করছে মাহফিলে; তারা মাহফিলের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।’
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিন দিনব্যাপী বৃহৎ মাহফিল হয়েছে যশোরে। পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এর মধ্যে অসংখ্য মানুষের মুঠোফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি।’