বাঁশঝাড়ের মাথায় একেবারে ৪৫ ফুট উচুতে ওঠা এক নারীকে নিচে নামানোর চেষ্টা
বাঁশঝাড়ের মাথায় একেবারে ৪৫ ফুট উচুতে তরতর করে বেয়ে উঠে চিৎকার শুরু করলেন এক গৃহবধূ। নানা অনুনয়-বিনয় করেও তাকে নিচে নামাতে পারলেন না আত্মীয়-স্বজনেরা। বাধ্য হয়েই জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯- এ কল করে ঢাকা হলো ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের। তারাও ২-৩ ঘন্টা গলদঘর্ম হয়ে নিচে নামালেন সেই ‘ভূতে ধরা’ নারীকে।
গত শুক্রবার ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোরা ইউনিয়নের বিলডোরা মোজাকান্দা মসজিদের পাশে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গ্রামবাসী বলছে, ওই নারীকে জ্বীন অথবা ভূতে ধরেছে- তা না হলে বাঁশঝাড়ের মাথায় উঠা ওই নারীর পক্ষে সম্ভব নয়।
স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে ওই গৃহবধূকে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে তার পরিবারের সদস্যরা অনেকক্ষণ পর বাঁশঝাড়ের মাথায় দেখতে পান। তারা অনেক চেষ্টা করেও গৃহবধূকে নামাতে ব্যর্থ হন। পরে প্রতিবেশী খলিলউল্লাহ চৌধুরী সোহাগ ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯- এ ফোন করে বিষয়টি অবগত করেন। হালুয়াঘাট ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ২ ঘণ্টার চেষ্টায় ওই নারীকে বাঁশঝাড় থেকে নিরাপদে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল ইসলাম বলেন, ওই নারীকে সম্ভবত জ্বিন না হয় ভূতে বাঁশঝাড়ে তুলেছে। তা না হলে এতো ওপরে নিজে নিজে উঠাটা কঠিন।
আবু হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমি বাড়িতে ছিলাম, হঠাৎ হুনি ইন্নছ ভাইয়ের পুতের বউরে জ্বীনে ধরছে। তারে বাঁশের আগাই তুলছে, তাড়াতাড়ি আমি ও আমরা বাড়ির কয়েকজনকে নিয়া কাছে গিয়ে অনেক চেষ্টা করি নামানো সম্ভব হয় নাই। বাঁশ ঝড়ের ওপর থেকে কয় নতুন শাড়ি দেওয়ন লাগব। নতুন শাড়িও দিছি তার পড়েও নামে নাই।’
ওই নারীর শ্বশুর ইন্নছ আলী বলেন, ‘আমার ছেলেটার সহজ-সরল বউয়ের এইডা কি হইলো। কবিরাজ আইন্না দেহাইতাছি। এখনও ভালো হয় নাই।’
মোজাকান্দা মসজিদের ইমাম ওয়ালিউল্লাহ মিয়া বলেন, আমি যখন শুনছি এই নারী বাঁশঝাড়ের ওপরে তখন আমরা বাঁশঝাড়ের গোড়ায় দাঁড়িয়ে কয়েকবার আযান দেই, তার পরেও নামানো সম্ভব হয় নাই। পরে এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রশি দিয়ে বেঁধে নিচে নামায় তাকে।’
হালুয়াঘাট ফায়ার সার্ভিসের ফাইটার মোশারফ হোসেন বলেন, একটি বাঁশঝাড়ের আনুমানিক ৪৫ থেকে ৫০ ফিট উঁচুতে ওই নারী উঠে দুইটি বাঁশ ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাঁশঝাড় বাতাসে দুলছে এবং যে কোন সময় ওই নারী পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। পরে কৌশলে বাঁশে দড়ি বেঁধে তাকে নিচে নামানো হয়।
হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের বলেন, ৯৯৯ কল পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ওই নারীকে নিরাপদে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রাণেশ চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, ওই নারীকে মানসিক ডাক্তার দেখানো উচিত। তাহলেই সুস্থ হয়ে যাবেন তিনি।