আবারো মর্মান্তিক এক ঘটনার সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। যে বয়স উচ্ছ্বলতার, যে বয়স ছুটে বেড়ানোর ঠিক সেই বয়সেই ধর্ষণের শিকার হয়ে জীবন- মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৮ বছরের এক শিশু। মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার এই ঘটনা ঘটে। নিজ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বোনের শ্বশুর ও দুলাভাইয়ের হাতেই ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি।
বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে যাবে দেখে, বড় বোন আদরের ছোট বোনটিকে থেকে যেতে বলেছিল তার বাড়িতেই। ছোট্ট শিশুটিও ভেবেছিল, দুলাভাই যখন বাসায় আছেন, তখন নিশ্চিন্তেই রাত কাটানো যাবে। কিন্তু সেই রাতই কাল হয়ে এলো শিশুটির জীবনে।
দুপুরের দিকে বড় বোন বাসায় ফিরতেই রুমের দরজা বন্ধ দেখতে পেল। ভেতরটা অন্ধকার হয়ে ছিল। কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে লাইট জ্বালাতেই চোখে পড়ল এক ভয়ার্ত দৃশ্য—এক কোণে ছোট বোনটি পড়ে আছে এলোমেলোভাবে। তার মুখ ফ্যাকাশে, নিস্তেজ, আর চোখ দুটি যেন নিভে আসা প্রদীপের মতো অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।
বড় বোন কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না, তার আদরের ছোট বোনটির সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছিল। যখন সত্যটা সামনে এল, তখন তা মেনে নিতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। বড় বোন অসহায়ভাবে শাশুড়ির কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করেন বোনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে শাশুড়ি তার অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন বারবার!
অবশেষে বড় বোনের অগণিত অনুরোধের পর ছোট বোনটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শাশুড়ি সঙ্গে আসলেও হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তিনি পালিয়ে যান।
বাচ্চা মেয়েটির অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটতে থাকে। অক্সিজেন মাস্কের আড়ালে তার করুণ আর্তনাদ হাসপাতালের বাতাস ভারী করে তোলে। আট বছরের নিষ্পাপ শিশুটি, যে কিছুদিন আগেও পুতুল নিয়ে খেলতো, আজ সে অসাড় হয়ে পড়ে হাসপাতালের বিছানায়।
মেয়েটির মা আর বড় বোন চুপচাপ তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মা মাথায় হাত বুলিয়ে ফিসফিস করে বলছিলেন, "সব ঠিক হয়ে যাবে মা..." কিন্তু সত্যিই কি সব ঠিক হবে?
শিশুটির চোখে ভয় আর প্রশ্নের মেঘ—তার দোষ কী ছিল? কীসের দোহাই দিয়ে এই পাশবিকতা লুকানো হবে?
এদিকে, মাগুরার পুলিশ সুপার (এসপি) মিনা মাহমুদা বলেন, এই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির বোনজামাই মো. সজিব শেখ ও তাঁর বাবা হিটু মিয়াকে আটক করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে—এবারও কি ধর্ষকের পক্ষেই দাঁড়াবে সমাজ? নাকি এই অবুঝ শিশুটি পাবে তার ন্যায় বিচার?