ঋণ গ্রহীতা দুই ব্যবসায়ীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান নেন এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারারী। তাদের হাতে ছিল ঋণ গ্রহীতার ছবিযুক্ত ব্যানার।
বারবার নোটিশ দিয়ে বা ধর্ণা দিয়েও ঋণ আদায় করতে পারছিলেন না একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাধ্য হয়েই ঋণ গ্রহীতা দুই ব্যবসায়ীর বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান নিলেন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারারী। করলেন মানববন্ধন। এ সময়ে তাদের হাতে ছিল ঋণ গ্রহীতার ছবিযুক্ত ব্যানার। মাইক হাতে শীর্ষ কর্মকর্তারা বক্তব্যও দিয়েছেন। ঋণ আদায়ে সামাজিকভাবে চাপ প্রয়োগের উদ্দেশ্যে এমন অভিনব কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংকের কুষ্টিয়ার স্থানীয় বেশ কয়েকটি শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শনিবার ছুটির দিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় তারা ঋণ গ্রহীতাদের বাড়ির সামনে গিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন। ঋণ গ্রহীতার ছবিযুক্ত ব্যানার হাতে নিয়ে মানববন্ধন করেন তারা। বেলা ১১ থেকে দুপুর ১টা একটা পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরের কোর্টপাড়ায় ঋণখেলাপি রাশিদুল ইসলামের বাড়ি এবং পুলিশ লাইনের সামনে হাজীগলিতে ইউনুস আলীর বাড়ির সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনেও একই কর্মসূচি পালন করেন তারা। ঋণ খেলাপি দু’জনই চালকল ব্যবসায়ী।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বালিয়াশিশা এলাকায় আল্লাহর দান রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী রাশিদুল একজন চালকল ব্যবসায়ী। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের নামে ২০১০ সালে ব্যাংক থেকে প্রথমবার ১ কোটি টাকা ঋণ নেন। এর পরের বছরগুলোতে তিনি বিনিয়োগ বাড়াতে থাকেন। কিন্তু ব্যাংককে টাকা ঠিকমতো পরিশোধ করছিলেন না। বর্তমানে এই ব্যবসায়ীর কাছে ব্যাংকের পাওনা ১৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। ৬ মাস ধরে তিনি কোনো টাকা পরিশোধ করছেন না। বারবার নোটিশ দেয়া হলেও দিনি সাড়া দেননি।
আরেক ব্যবসায়ী কবুরহাট এলাকার ইফাদ অটো রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী ইউনুস আলী তার চালকলের বিপরীতে ব্যাংক থেকে ২০১৭ সালে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বর্তমানে তার কাছে ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গত তিন বছর ধরে তিনিও কোনো টাকা পরিশোধ করেননি। ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে তাকে বারবার নোটিশ দেয়া হয়েছে।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা বলছেন, নিরুপায় হয়ে শনিবার সকাল থেকে তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় বাড়ির সামনে এমন কর্মসূচি দেখতে আশপাশের বাসিন্দারা সেখানে জড়ো হন। তাঁরা ব্যতিক্রম এই উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চান। পরে ব্যাংক কর্মকর্তারা উপস্থিত সবাইকে বিষয়টি জানান। বেলা ১১টার দিকে কোর্টপাড়া এলাকায় আধাঘণ্টা ধরে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ব্যানার হাতে আধাঘণ্টা অবস্থান করে তাঁরা চলে যান।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ব্যাংকের কুষ্টিয়া শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ ইউনুছ আলী বলেন, ‘রাশিদুল ইসলামের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে তাঁর বাড়ি ও অফিসে গিয়েছিলাম। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাঁর কারণে শাখায় আমানতকারীদের টাকা দিতে পারছি না। কারণ আমানতের টাকা দিয়েই তো তাদের বিনিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।’
ব্যাংক কর্মকর্তা মইনুল হোসেন বলেন, শত চেষ্টা করেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। সামাজিক চাপ প্রয়োগের জন্যই তাঁরা এ কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
রাশিদুল ইসলামকে বাসায় পাওয়া যায়নি। এজন্য তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। বাড়ির অন্য বাসিন্দারাও কথা বলতে রাজি হননি।