ছবি: মেট্টো টিভি
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত রাজশাহী বিভাগের অন্যতম জেলা জয়পুরহাট। এ জেলার মোট আয়তন প্রায় ৯৬৬ বর্গ কিলোমিটার এবং ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৯৮০ জন।
জয়পুরহাটের উত্তরে গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলা এবং কিছু অংশে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে বগুড়া ও নওগাঁ জেলা, পূর্বে বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলা এবং পশ্চিমে নওগাঁ জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ জেলা-জয়পুরহাট সদর, আক্কেলপুর, কালাই, ক্ষেতলাল এবং পাঁচবিবি।
পাখির চোখে জয়পুরহাট; ছবি: মেট্টো টিভি
অর্থনীতি ও কৃষি উৎপাদন
জয়পুরহাট জেলা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে, এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে আলু উৎপাদিত হয়, যা দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা এবং সবজির উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য। শিল্প ও ব্যবসার ক্ষেত্রেও জয়পুরহাট এগিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে রেলস্টেশনের আশেপাশে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার লক্ষ্য করা যায়।
জয়পুরহাটের কৃষিজমি;ছবি: মেট্টো টিভি
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
জয়পুরহাট জেলার ইতিহাস সম্পর্কে ১৬ শতকের আগে তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ধারণা করা হয়, এটি গৌড়ের পাল ও সেন রাজাদের শাসনাধীন ছিল। পরবর্তীতে ব্রিটিশ আমলে এখানে বেশ কয়েকটি নীলকুঠি স্থাপিত হয়। উনিশ শতকের শেষের দিকে পাঁচবিবি এলাকায় একটি রেলস্টেশন স্থাপন করা হয়, যা এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়পুরহাট ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী লড়াইয়ের কেন্দ্রস্থল। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে এটি বগুড়ার অধীন মহকুমা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং ১৯৮৪ সালে স্বতন্ত্র জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
ঐতিহাসিক স্থান; ছবি: মেট্টো টিভি
দর্শনীয় স্থান
জয়পুরহাট জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শিশু উদ্যান ও রিসোর্ট। আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এই পার্কটি শিশুদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়া লকমা জমিদার বাড়ি, আছরাঙ্গা দিঘী, নান্দাইল দিঘী, বার শিবালয় মন্দিরসহ আরও বেশ কিছু ঐতিহাসিক ও পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে।
শিশু উদ্যান, জয়পুরহাট; ছবি: মেট্টো টিভি
পর্যটন ও আবাসন ব্যবস্থা
জয়পুরহাটে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। শিশু উদ্যানে আধুনিক রিসোর্টের সুবিধা ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থানে আবাসিক হোটেল ও রেস্টহাউস রয়েছে।
যাতায়াত ব্যবস্থা
ঢাকা থেকে জয়পুরহাটে যাওয়ার জন্য সড়ক ও রেলপথ উভয়ই রয়েছে। ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নীলসাগর, একতা এবং দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে সহজেই জয়পুরহাট যাওয়া যায়। এছাড়া গাবতলী, মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর ও কল্যাণপুর বাস টার্মিনাল থেকে জয়পুরহাটগামী এসি ও নন-এসি বাসের ব্যবস্থা রয়েছে।
রেলওয়ে স্টেশন, জয়পুরহাট; ছবি: মেট্টো টিভি
জয়পুরহাট জেলা তার ঐতিহ্য, কৃষি উৎপাদন, ইতিহাস ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে উত্তরবঙ্গের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এই জেলার উন্নয়ন এবং পর্যটন খাতে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে এটি আরও সমৃদ্ধি লাভ করবে।