শরীয়তপুর হাসপাতালের হিমাগারে ২ ভারতীয় নাগরিকের লাশ দীর্ঘদিন পড়ে আছে।

 
দেশ

কূটনৈতিক জটিলতা: ২ ভারতীয় নাগরিকের লাশ দীর্ঘদিন হিমাগারে

সাজা শেষে মুক্তির পরও আটকে আছেন আরও ২০ জন

নিজস্ব প্রতিবেদক

কূটনৈতিক জটিলতার কারণে দুই ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। দুই বছর ধরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের হিমাগারে পড়ে এই মরদেহ। অন্যদিকে কারাভোগ শেষে খালাস পেলেও একই কারনে ২০ ভারতীয় নাগরিক আটক আছে শরিয়তপুর কারাগারে। এসব ভারতীয় নাগরিককে সে দেশে হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। তারা জানান, তাঁদের বিষয়ে অবহিত করে কয়েক দফা চিঠি দিলেও ভারতের পক্ষ থেকে সাড়া মিলছে না।

শরীয়তপুর জেলা কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে অনুপ্রবেশের দায়ে পদ্মা সেতু এলাকা থেকে আটক করা হয় চার নারীসহ ২২ ভারতীয় নাগরিককে। এরপর তাঁরা বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে বন্দী ছিলেন। প্রায় দুই বছর আগে সবারই সাজাভোগের মেয়াদ শেষ হলেও জেল থেকে এখনো তাঁরা ছাড়া পাননি। বিষয়টি জানানো হলেও ভারত সাড়া না দেওয়ায় তাঁরা এখনো কারাভোগ করছেন।

তাঁদের মধ্যে সত্যেন্দ্র কুমার (৪০) ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি এবং বাবুল সিং (৩৫) একই বছরের ১৫ এপ্রিল শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২০২২ সালের ১৮ মে বাবুল সিং ও ৮ অক্টোবর সত্যেন্দ্র কুমারকে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা থেকে আটক করে জাজিরা ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ। দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনই শরীয়তপুর জেলা কারাগারে হাজতি ছিলেন। কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ। মারা যাওয়ার পর থেকে ওই দুই ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে।

২০ ভারতীয় নাগরিক হলেন—রমেশ, মনা, জিয়া সিং, মোনা ঠাকুর, ডালিফ, রাহুল চৌধুরী, দেবী, সরোজিনী, কৃষ্ণ মাল, সুনীল কুমার, বুটি, উপেন্দ্র ইয়াদব, আয়েনার, রাজন, আন্নু, উপেন্দার রায়, সনু সিং, আলফি আরিফ, প্রমথ কুমার ও চরল দেবী।

শরীয়তপুর কারাগারের জেল সুপার গোলাম দস্তগীর বলেন, ‘অনুপ্রবেশের দায়ে গ্রেপ্তার ২২ জন ভারতীয় নাগরিক শরীয়তপুর কারাগারে সাজাভোগ করেন। তাঁদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। কিন্তু একাধিকবার চিঠি চালাচালির পরও ভারতীয় হাইকমিশনের ছাড়পত্র না পাওয়ায় তাঁদের হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে দুই হাজতি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। কূটনৈতিক জটিলতার কারণে তাঁদের লাশও হস্তান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁদের পেছনে সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় হচ্ছে। এ নিয়ে আমরা বিপাকে আছি।’

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটির হিমাগারে চারটি মরদেহ রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দুই বছর ধরে ভারতীয় দুই নাগরিকের মরদেহ রয়েছে এখানে। একটি মরদেহ রাখতে প্রতিদিন খরচ হয় ২ হাজার টাকা। সে হিসাবে ভারতীয় দুই নাগরিকের মরদেহ রাখতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে এ পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দুই বছর ধরে ভারতীয় দুই নাগরিকের মরদেহ হাসপাতালের মরচুয়ারিতে পড়ে আছে। আমরা অনেকবার চিঠির মাধ্যমে মরদেহ দুটি স্থানান্তরের জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না। কারিগরি ত্রুটির কারণে অনেক সময় মরচুয়ারিতে নির্দিষ্ট মাত্রায় ঠান্ডা না হওয়ায় মরদেহে পচন ধরার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া নতুন মরদেহ সংরক্ষণে জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় মরদেহ দুটি দ্রুত স্থানান্তরের দাবি করছি।’