কুমিল্লার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা। ছবি-সংগৃহিত।
কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে হেনস্তাকারীদের অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সোমবার সকালে বিজিবির সদরদপ্তরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু সংখ্যক দুস্কৃতিকারী সব জায়গায় রয়ে গেছে। যে দুস্কৃতিকারীরা তাকে হেনস্তা করেছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
বিজিবি দিবস ২০২৪ উপলক্ষে পদক প্রদান ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
রবিবার দুপুরের দিকে ওই মুক্তিযোদ্ধার নিজ এলাকা চৌদ্দগ্রামের কুলিয়ারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাঁকে এলাকায় ঘুরানো হয়। এক পর্যায়ে এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে রাতেই এ ঘটনার ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এতে দেখা যায় আবুল হাসেম নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে স্থানীয় অহিদ, রাসেল, পলাশসহ ১০-১২ জন আওয়ামী লীগ আমলে তাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মুক্তিযোদ্ধা কানুর গলায় জুতার মালা পরিয়ে দিয়ে এলাকায় ঘুরিয়ে তাকে আর এলাকায় আসবেন না বলেও অঙ্গীকার নেয়।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইকে জনসম্মুখে সম্মানহানির ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্থানীয়রা জানায়, মুক্তিযোদ্ধা কানু কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য। আওয়ামী লীগের তৎকালীন স্থানীয় এমপি মুজিবুল হকের সঙ্গে বিরোধের কারণে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয় ওই সময়। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করে মুজিবুল হকের নির্দেশে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতারা তখন আব্দুল হাই কানুর বাড়ি একাধিকবার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছিলেন। রোববার সকালে তাঁকে একা পেয়ে স্থানীয় ১০-১২ জন ব্যক্তি গলায় জুতার মালা দেয়।
ওই ব্যক্তিরা বলতে থাকেন ‘এক গ্রাম লোকের সামনে মাফ চাইতে পারবেন কিনা?’ অন্যরা বলতে থাকে, ‘কুমিল্লা আউট, এলাকা আউট, এলাকা ছেড়ে দাও।’
ভুক্তভোগী ওই মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, ‘হঠাৎ আমাকে একা পেয়ে জোর করে ওরা জুতার মালা গালায় দিয়ে ভিডিও করে। বিচার কার কাছে চাইব, মামলা দিয়ে আর কী হবে।’