অবৈধ হ্যান্ডসেট বাজারজাতকারীদের দৌরাত্ম থামছেই না। বর্তমানে দেশের নেটওয়ার্কে বৈধ মোবাইল সেটের চেয়ে অবৈধ সেট সচল হচ্ছে বেশি। মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এমআইওবি) এর তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে স্মার্টফোন বাজারের ৬০ শতাংশের বেশি চোরাকারবারীদের দখলে আছে।
দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ওপর চড়া শুল্ক আরোপের কারণে চোরাই হ্যান্ডসেটের দিকে ক্রেতারা ঝুঁকছেন বলে দাবি স্থানীয় নির্মাতাদের। পাশাপাশি ফোন নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সিস্টেম কার্যকর না থাকাকেই দায়ী করছেন তারা।
ট্রান্সশন্স হোল্ডিংস বাংলাদেশ লিমিটেডের সিইও রেজোয়ান আহমেদ বলেছেন, আমরা এ নিয়ে কথা বলছি প্রায় ১০ বছর ধরে। আমরা অনেকদিন ধরে এটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সফটওয়্যারও বাস্তবায়ন হয়েছে ৪-৫ বছর হলো। কিন্তু আমরা এখনও এটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমাদের অনেক পরে পাকিস্তান মার্কেটে এসেও কিন্তু তারা বাস্তবায়ন করে ফেলেছে। আমাদের থেকে কিন্তু তাদের গ্রে মার্কেট অনেক কম, ১ শতাংশেরও কম। আমার কাছে মনে হয় যে আমরা যদি এটা চালু করতে না পারি, তাহলে আমরা যে একটা কারেকশন মার্কেট দেখছি সেটা করা অসম্ভব হয়ে যাবে।
চোরাই হ্যান্ডসেটে অবাধ বাজারজাতের কারণে দেশি নির্মিত হ্যান্ডসেটের উৎপাদনে ধ্বস নেমেছে। উৎপাদন কমেছে ৪০ শতাংশের বেশি। এনইআইআর পুরোপুরি কার্যকর হলে নেটওয়ার্কে সিম ও হ্যান্ডসেট লক করার সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন মোবাইল অপারেটররা।
এই সুবিধা নিশ্চিত করা হলে নেটওয়ার্ক থেকে চোরাই হ্যান্ডসেট বিচ্ছিন্ন করা যাবে। অন্যদিকে, কিস্তি ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধায় ক্রেতার কাছে স্মার্টফোন সহজলভ্য করা সম্ভব।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার সাহেদ আলমর বললেন, যদি সিম ও ক্যারিয়ার লক না করা হয় তাহলে তাদের যে ইনভেস্টমেন্ট আছে, সেটির কোনও নিরাপত্তা নেই। দুই-আড়াই বছর ধরেই এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা এখনও পর্যন্ত সমাধান পাইনি। আমরা বিটিআরসির সাথে কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত এটার একটা সমাধান হবে।
পরিসংখ্যান বলছে, চোরাই হ্যান্ডসেটের কারণে বছরে ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হচ্ছে সরকারকে। দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেট সাশ্রয়ী করতে উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যায়ে স্তরভিত্তিক কর কাঠামো সহনশীল করার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার ডাক ও টেলিকযোগাযোগ বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের।
তিনি বলেন, ইন্টারনেটের দাম সস্তা করা, ইন্টারনেটের মান ভালো করা, মানুষের হাতে হাতে ডিজিটাল ডিভাইস পৌঁছে দেয়া এবং সেই ডিভাইসে পর্যাপ্ত সেবা নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি। আর দেশীয় মোবাইল উৎপাদক যারা আছে তাদের শুল্ক যাতে না বাড়ে। স্টেজ ভ্যাটগুলো যাতে কমে আসে, সেজন্য আমরা ব্যক্তিগতভাবে সরকারকে অনুরোধ করেছি। এখন সরকারেরও তো রাজস্ব সংগ্রহের একটা চাপ আছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ১৭ টি প্রতিষ্ঠান হ্যান্ডসেট নির্মাণ করছে। বিটিআরসির তথ্য বলছে, মোট চাহিদার ৯৯ শতাংশ পূরণে সক্ষম এসব প্রতিষ্ঠান।