কে. এম. আনিসুর রহমান রানা

 
বিনোদন

“চিকিৎসা আমার দায়িত্ব, সংগীত আমার আত্মপ্রকাশ”

নিজস্ব প্রতিবেদক

কে. এম. আনিসুর রহমান রানা একজন চিকিৎসক এবং সংগীতশিল্পী। শৈশবে রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে সংগীতজীবন শুরু করলেও পরে ব্যান্ড মিউজিকের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়। আইয়ুব বাচ্চুর গিটার বাজানো দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি গিটার শেখেন। বর্তমানে কানাডার টরন্টোতে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি নিজের লেখা ও সুরে নিয়মিত গান তৈরি করছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত তার গানচিত্র “উত্তরাধিকার”, “গল্প প্রহর” এবং “অগ্নিস্নান” শ্রোতাদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সেই সূত্রে তিনি কথা বলেছেন মেট্রো টিভির সাথে...

সম্প্রতি প্রকাশিত আপনার “উত্তরাধিকার”, “গল্প প্রহর” এবং “অগ্নিস্নান”—গানগুলো সৃষ্টির অনুপ্রেরণা কী?

“উত্তরাধিকার” লিখেছি আমার ছেলে ও তার ভবিষ্যৎকে কেন্দ্র করে। বাবার ভালোবাসা, স্বপ্ন, আদর্শ এবং মানুষ হয়ে ওঠার পথনির্দেশ এই গানটিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।

“অগ্নিস্নান” মূলত সময়ের বাস্তবতা, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতিফলন—যেখানে মানুষের ভেতরের লড়াই প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। এই গানটি বাংলাদেশে জুলাই আন্দোলনে শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতাকে সম্মান জানাতে তৈরি করা। বাংলাদেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না, সেই স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য কোটি জনতা পথে নামে এবং সফল হয়।

“গল্পপ্রহর” লিখেছি আমার সহধর্মিণীকে উৎসর্গ করে। আমার যাপিত জীবনের হাজারো ব্যস্ততা, চ্যালেঞ্জ, ভাঙা-গড়ার প্রতিটি পদক্ষেপে আমার স্ত্রী আমাকে সহযোগিতা করে, সমর্থন ও অনুপ্রেরণা যোগায়। তার প্রতি অগাধ ভালোবাসার প্রতিফলন ঘটেছে গানটিতে।

আপনার সংগীতযাত্রা শুরু হয়েছিল কীভাবে?

আমার সংগীতযাত্রা শুরু আসাদ গেটের ঝংকার ললিত কলা একাডেমিতে। তখন আমি চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। মায়ের অনুপ্রেরণায় সেখানে রবীন্দ্রসংগীত শেখা শুরু করি। সেখান থেকেই গান শেখার প্রথম হাতেখড়ি।

রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে শুরু হলেও পরে ব্যান্ড মিউজিকে ঝোঁক তৈরি হওয়ার পেছনের গল্পটা কেমন?

নব্বইয়ের দশকের দিকে বিটিভিতে মাইলস, ফিডব্যাক, এলআরবি, ওয়ারফেইজ-এর গান শুনে ব্যান্ড মিউজিকের প্রতি অগাধ আগ্রহ তৈরি হয়। বিশেষ করে আইয়ুব বাচ্চু ভাইয়ের গিটার বাজানো আমার জীবনে বড় প্রভাব ফেলে। আইয়ুব বাচ্চুর গিটার বাজানো শুনেই গিটার শেখা এবং ব্যান্ড মিউজিক করার স্বপ্ন জাগে।

মেডিকেল ক্যারিয়ার ও সংগীত—এই দুই ভিন্ন জগৎকে কীভাবে ব্যালান্স করেন?

চিকিৎসক হওয়া মানেই অনেক চাপ আর দায়িত্ব। তবে সংগীত আমার কাছে মানসিক প্রশান্তির জায়গা। কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে আমি গিটার হাতে তুলি, নতুন সুরে ডুবে যাই। বলা যায়—চিকিৎসক পেশা আমার দায়িত্ব, আর সংগীত আমার আত্মপ্রকাশ।

রোগী দেখার পর ক্লান্ত দিনশেষে গিটার হাতে নেওয়া—এই মুহূর্তটাকে আপনি কেমনভাবে উপভোগ করেন?

কর্মক্লান্ত দিনের শেষে গিটার হাতে নেওয়া মানেই স্বর্গীয় এক অনুভূতি। পেশাগত কাজের সময় নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করাও আমার ধর্ম। তবে গানের সমুদ্রে ডুব দেওয়ার সুযোগ এলে সেটা মনকে অনেক সতেজ ও প্রফুল্ল করে তোলে।

প্রবাসে ব্যান্ড মিউজিক করার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করলে কেমন ভিন্নতা খুঁজে পান?

বাংলাদেশে ব্যান্ড মিউজিকের একটা আলাদা উন্মাদনা আছে, বাংলা গানের শ্রোতার সংখ্যা অনেক বেশি। প্রবাসে তুলনামূলক ছোট কমিউনিটি হলেও এখানে (কানাডায়) একটু বাড়তি আন্তরিকতাও পাওয়া যায়। সবাই গান শুনতে আসেন আপন ঘরের আবহ তৈরি করতে। তবে অবশ্যই বাংলাদেশের স্টেজ পারফরম্যান্সের মতো এনার্জি আর ব্যাপ্তি প্রবাসে পাওয়া কঠিন।

পরিবারের সাথে কে. এম. আনিসুর রহমান রানা

আপনার গান মুক্তির কথা বলে, স্বপ্নের কথা বলে এবং অনুপ্রেরণার গল্প তুলে ধরে। নিজের লেখা ও সুরে এমন গান করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে?

আমার কাছে গান মানে কেবল বিনোদন নয়, বরং অনুভূতি আর বার্তা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম। জীবনের অভিজ্ঞতা, চারপাশের মানুষ, সমাজ-সংসারের টানাপোড়েন, সংগ্রাম আর ভালোবাসা—এসবই আমাকে অনুপ্রাণিত করে। আমি চাই আমার গান শুনে কেউ নিজের ভেতরে শক্তি খুঁজে পাক, স্বপ্ন দেখুক, কিংবা কষ্টের মাঝেও এগিয়ে যাওয়ার সাহস খুঁজে পাক। তাই গান লিখতে ও সুর করতে গিয়ে আমি সবসময় এমন বিষয় খুঁজি যা মানুষের হৃদয়ে আলো ছড়াতে পারে।

নতুন কোনো প্রজেক্ট বা পরিকল্পনা নিয়ে শ্রোতাদের কিছু জানাতে চান?

আমি নিয়মিতভাবে নিজের লেখা ও সুরে নতুন গান করার চেষ্টা করছি। কয়েকটি গান রেকর্ডের কাজ চলছে, যেগুলো খুব শিগগিরই প্রকাশ পাবে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো “ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন” । গানটি আমার কথা ও সুরে তৈরি হচ্ছে। আশা করছি গানটি মানুষের জীবনযুদ্ধে একটু হলেও অনুপ্রেরণা যোগাতে সক্ষম হবে।