সৃজনশীলতার সংকটে বড় পর্দার নতুন বাস্তবতা
এক সময় বলিউড মানেই ছিল নতুন গল্প, নতুন চরিত্র আর নতুন আবেগের ঝুঁকি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বড় পর্দায় চোখ রাখলেই এক প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে-
এই গল্পটা কি আগে কোথাও দেখা হয়নি?
দক্ষিণী সিনেমার রিমেক, পুরনো হিট ছবির রিবুট, আন্তর্জাতিক সিনেমার অনুপ্রেরণায় তৈরি গল্প- এই চক্রে ঘুরছে বলিউডের বড় অংশ। ফলে মৌলিক গল্প ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে কি না, সেই বিতর্ক আবারও সামনে এসেছে।
রিমেকের দাপট কেন বাড়ছে
রিমেকের দিকে ঝুঁকার পেছনে প্রথম ও প্রধান কারণ বাণিজ্যিক নিরাপত্তা। একটি পরীক্ষিত গল্প, পরিচিত চরিত্র বা আগেই জনপ্রিয় সিনেমার নাম থাকলে প্রযোজকদের ঝুঁকি কমে। দর্শক হলে যাবে, এই বিশ্বাস থেকেই রিমেকের সংখ্যা বাড়ছে।
আরেকটি বড় কারণ, OTT যুগের চাপ।OTT প্ল্যাটফর্মে প্রতিদিন নতুন কনটেন্ট আসছে। সেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রযোজকরা দ্রুত পরিচিত গল্প বেছে নিচ্ছেন, যাতে প্রচার সহজ হয়।
সমস্যা কোথায় তৈরি হচ্ছে
রিমেক নিজে কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা তৈরি হচ্ছে তখনই, যখন-
গল্পের আত্মা হারিয়ে যায়
স্থানীয় বাস্তবতার সঙ্গে মানানসই করা হয় না
শুধু তারকা দিয়ে ঘাটতি ঢাকার চেষ্টা হয়
ফলে দর্শক পাচ্ছেন পরিচিত কিন্তু প্রাণহীন সিনেমা।
এক সময় যে রিমেকগুলো ছিল সম্মানজনক পুনর্নির্মাণ, এখন সেগুলোর অনেকটাই হয়ে উঠছে যান্ত্রিক অনুকরণ।
মৌলিক গল্প কেন ঝুঁকির মুখে
মৌলিক গল্প মানেই অনিশ্চয়তা। নতুন চরিত্র, নতুন কাঠামো, নতুন আবেগ- সবকিছুই পরীক্ষামূলক।
প্রযোজকরা ভয় পান-
“গল্প কাজ না করলে পুরো বিনিয়োগ ডুবে যাবে।”
কিন্তু এই ভয়ের ফলেই সৃজনশীলতার জায়গা সংকুচিত হচ্ছে। নতুন লেখক, নতুন পরিচালক সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরপাক খাচ্ছে একই গল্পের ভিন্ন প্যাকেজে।
দর্শকের মনোভাব বদলাচ্ছে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে দর্শকের আচরণে।
আজকের দর্শক আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তারা-
ট্রেলার দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়
রিভিউ পড়ে হলে যায়
OTT–তে বিকল্প থাকায় খারাপ সিনেমা এড়িয়ে যায়
ফলে রিমেক হলেও যদি গল্পে নতুনত্ব না থাকে, দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক বড় বাজেটের রিমেক বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ার ঘটনা তারই প্রমাণ।
তারকা বনাম গল্প- কোনটা জিতছে?
এক সময় তারকাই সিনেমা চালাতেন।
কিন্তু এখন তারকার নামও গল্পের দুর্বলতা ঢাকতে পারছে না।
দর্শক এখন প্রশ্ন করছে-
“এই সিনেমা আমাকে নতুন কী দিচ্ছে?”
যেখানে মৌলিক গল্প শক্তিশালী, সেখানে নতুন মুখও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। আবার যেখানে শুধু পরিচিত নাম আর পুরনো গল্প, সেখানে বড় তারকাও ব্যর্থ হচ্ছেন।
ভবিষ্যৎ কোন পথে
বিশেষজ্ঞদের মতে, বলিউড এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।
একদিকে নিরাপদ রিমেকের পথ, অন্যদিকে ঝুঁকিপূর্ণ কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি মৌলিক গল্পের রাস্তা।
যদি ইন্ডাস্ট্রি শুধু রিমেকের ওপর নির্ভর করে, তাহলে-
দর্শকের আগ্রহ কমবে
গল্পের বৈচিত্র্য হারাবে
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা কঠিন হবে
কিন্তু যদি নতুন লেখক, নতুন চিন্তা ও নতুন কনটেন্টকে জায়গা দেওয়া হয়, তাহলে বলিউড আবারও তার সৃজনশীল পরিচয় ফিরে পেতে পারে।
শেষ কথা
রিমেক কোনো অপরাধ নয়, কিন্তু সেটাই যদি একমাত্র পথ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সিনেমা শিল্পের আত্মা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দর্শক এখন আর শুধু পরিচিত গল্প দেখতে চায় না; তারা চায় ভালোভাবে বলা নতুন গল্প।
বলিউডের সামনে তাই একটাই বড় প্রশ্ন-
নিরাপদ অতীত আঁকড়ে থাকবে, নাকি ঝুঁকি নিয়ে ভবিষ্যৎ তৈরি করবে?