মধ্যপ্রাচ্য বহু বছর ধরে বাংলাদেশি কর্মীদের প্রধান কর্মক্ষেত্র। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার ও ওমানে কাজ করে লাখো বাংলাদেশি প্রবাসী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ভিসা নবায়ন, ইকামা হালনাগাদ ও স্পনসরশিপ জটিলতায় এই কর্মীরা পড়ছেন চরম অনিশ্চয়তায়।
কাগজে-কলমে কর্মসংস্থান থাকলেও বাস্তবে অনেক বাংলাদেশি আজ বৈধ অবস্থান হারানোর ঝুঁকিতে।
কোথায় জটিলতা বাড়ছে
প্রবাসীদের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ভিসা নবায়নের সময়সীমা কমানো, ফি বৃদ্ধি এবং অনলাইন সিস্টেম জটিল হওয়ায় নিয়মিত কাগজ হালনাগাদ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা বা স্পনসর (কাফিল) ইচ্ছাকৃতভাবে ইকামা নবায়নে গড়িমসি করছেন।
বিশেষ করে যেসব কর্মী চাকরি পরিবর্তন করতে চান বা আগের মালিকের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন, তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন।
ইকামা আটকে গেলে কী হয়
ইকামা বা রেসিডেন্স পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই একজন প্রবাসী কার্যত অবৈধ অবস্থানে চলে যান। তখন কাজ করা তো দূরের কথা, স্বাভাবিক চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। পুলিশের ধরপাকড়, জরিমানা, আটক ও বহিষ্কারের ভয় সবসময় মাথার ওপর ঝুলতে থাকে।
অনেক ক্ষেত্রে ইকামা জটিলতার কারণে কর্মীরা মাসের পর মাস বেতন পান না, আবার দেশে ফিরতেও পারেন না—কারণ এক্সিট ভিসা পেতে প্রয়োজন হয় বৈধ কাগজপত্র।
নারী ও গৃহকর্মীদের ঝুঁকি বেশি
এই সংকট নারী প্রবাসী ও গৃহকর্মীদের ক্ষেত্রে আরও ভয়াবহ। অনেক নারী কর্মী অভিযোগ করছেন, ইকামা মালিকের কাছে থাকায় তারা আইনি সহায়তা চাইতেও সাহস পান না। ভিসা জটিলতাকে ব্যবহার করে কিছু মালিক তাদের ওপর অতিরিক্ত কাজের চাপ ও মানসিক নির্যাতন চালাচ্ছেন।
দালাল ও অবৈধ পথের ফাঁদ
ভিসা ও ইকামা সংকটকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালচক্র। দ্রুত নবায়ন বা ট্রান্সফারের আশ্বাস দিয়ে তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অনেকেই প্রতারিত হয়ে আরও জটিল অবস্থায় পড়ছেন।
প্রবাসী আয় ও দেশের ওপর প্রভাব
এই জটিলতার প্রভাব শুধু প্রবাসীদের জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়। কর্মহীনতা ও অনিশ্চয়তার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহেও প্রভাব পড়ছে। অনেকে বৈধভাবে কাজ করতে না পারায় আয় কমে যাচ্ছে, আবার কেউ কেউ দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
করণীয় কী
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রবাসীদের জন্য দূতাবাস ও শ্রম উইংয়ের আরও সক্রিয় ভূমিকা জরুরি। ভিসা ও ইকামা সংক্রান্ত অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি, আইনি সহায়তা ও সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়।
একই সঙ্গে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য প্রি-ডিপার্চার প্রশিক্ষণে ভিসা ও শ্রম আইনের বাস্তব জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করার ওপরও জোর দিচ্ছেন তারা।
শেষ কথা
মধ্যপ্রাচ্যে ভিসা ও ইকামা জটিলতা আজ আর বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়; এটি হাজারো বাংলাদেশি প্রবাসীর দৈনন্দিন বাস্তবতা। কাগজের একটি মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেই যে জীবন কতটা অনিশ্চিত হয়ে উঠতে পারে, তার বাস্তব প্রমাণ দিচ্ছেন এসব কর্মীরা।
সমাধান না হলে এই সংকট শুধু প্রবাসীদের নয়, দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামোকেও চাপে ফেলবে।