প্রবাস

বিদেশগামী কর্মীদের মেডিক্যাল টেস্টে হয়রানি: অভিযোগ জানাতে নতুন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু

বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়ায় দালাল ও টেস্ট-সেন্টারের অনিয়ম কমাতে সরকারের নতুন উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের মেডিক্যাল টেস্টকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম, দালালি, অতিরিক্ত খরচ ও হয়রানির অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজের উদ্দেশ্যে যারা যাচ্ছেন—তাদের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট সংগ্রহের সময় বিভিন্ন টেস্ট-সেন্টারের ইচ্ছামতো ফি আদায়, অযথা ‘ফেল’ দেখানো, রি-টেস্টের নামে ঘুষ দাবি—এসব অভিযোগ নিয়মিত উঠেছে।

এই বাস্তবতায় সরকার সম্প্রতি একটি অনলাইন অভিযোগ প্ল্যাটফর্ম চালুর ঘোষণা দিয়েছে, যার মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীরা যেকোনো ধরনের হয়রানি বা অনিয়মের তথ্য সরাসরি জানাতে পারবেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর জানিয়েছে—অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মেডিক্যাল টেস্ট বিদেশ যাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলোর একটি। অথচ এই জায়গাটিতে দালালচক্রের প্রভাব বেশি থাকায় শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতি এবং সময় নষ্ট হওয়া স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেক সময় অযথা ‘ফেল’ দেখিয়ে রি-টেস্টের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা—অভিযোগের বড় অংশই এসবকে কেন্দ্র করে।

প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বিদেশগামী কর্মীদের জন্য একটি সুরক্ষিত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা তৈরি করা জরুরি। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যেসব অনিয়ম বহুদিন ধরে চলে আসছিল, সেগুলো রোধ করা সহজ হবে। এখন থেকে কর্মীরা সরাসরি প্রমাণসহ অভিযোগ পাঠাতে পারবেন।”

এদিকে প্রবাসীর পরিবারের সদস্যরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ বিদেশ যাত্রার পথে হয়রানি কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে। অনেকেই বলেন, মেডিক্যাল টেস্টের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসলে দালালচক্রের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমে যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশগামী কর্মীরা দেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় শক্তি। তাদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে মেডিক্যাল টেস্ট-ব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি ছিল। নতুন এই ডিজিটাল চ্যানেল সেই সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

সরকার জানিয়েছে, অনিয়মে জড়িত টেস্ট-সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে—প্রয়োজনে লাইসেন্স বাতিলও করা হবে। অন্যদিকে, সঠিকভাবে কাজ করা মেডিক্যাল সেন্টারগুলোর একটি তালিকা প্রকাশেরও উদ্যোগ চলছে।

সব মিলিয়ে, বিদেশ যাওয়ার পথে শ্রমিকদের ঝামেলা কমিয়ে একটি আধুনিক ও দায়িত্বশীল পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে প্রবাস যাত্রা আরও সহজ ও নিরাপদ হবে—এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের।