স্বাস্থ্য

শিশু ও কিশোরদের জন্য সুষম পুষ্টি গাইড: সুস্থ ভবিষ্যতের ভিত্তি

শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে শৈশব ও কৈশোরে। এই সময়ের খাদ্যাভ্যাসই নির্ধারণ করে ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের দিকনির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শৈশব ও কৈশোর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিকাশপর্ব। এই সময়ে শরীর দ্রুত বেড়ে ওঠে, হাড় শক্ত হয়, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। অথচ বাংলাদেশসহ অনেক দেশে শিশু ও কিশোরদের একটি বড় অংশ অপুষ্টি, একঘেয়ে খাদ্যাভ্যাস ও ফাস্টফুড নির্ভরতার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষম পুষ্টি নিশ্চিত না হলে এই বয়সেই তৈরি হয় ভবিষ্যৎ ডায়াবেটিস, স্থুলতা, হৃদরোগ ও মানসিক সমস্যার বীজ।

সুষম পুষ্টি বলতে কী বোঝায়

সুষম পুষ্টি হলো এমন খাদ্যব্যবস্থা, যেখানে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী

  • কার্বোহাইড্রেট,

  • প্রোটিন,

  • ফ্যাট,

  • ভিটামিন ও মিনারেল,

  • পর্যাপ্ত পানি,

সবকিছুর সঠিক ভারসাম্য থাকে।

১) বয়সভিত্তিক পুষ্টির গুরুত্ব

শিশু (১–১০ বছর)

  • উচ্চতা ও ওজন বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত শক্তি ও প্রোটিন প্রয়োজন

  • হাড় ও দাঁতের গঠনে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি জরুরি

  • রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন এ, সি ও আয়রন গুরুত্বপূর্ণ

    কিশোর-কিশোরী (১১–১৮ বছর)

  • হরমোনজনিত পরিবর্তনের জন্য বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন

    মেয়েদের ক্ষেত্রে

  • আয়রনের চাহিদা বেশি

  • মানসিক চাপ ও পড়াশোনার জন্য পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য

২) সুষম খাদ্যের মূল উপাদান-

কার্বোহাইড্রেট (শক্তির উৎস) :

  • ভাত, রুটি, চিড়া, ওটস; শক্তি দেয় এবং দৈনন্দিন কাজ চালাতে সহায়তা করে

  • প্রোটিন; (বৃদ্ধির ভিত্তি)

  • ডাল, ডিম, মাছ, মুরগি, দুধ

  • পেশি ও কোষ গঠনে সহায়তা করে

  • চর্বি (সীমিত কিন্তু প্রয়োজনীয়)

  • বাদাম, তেলবীজ, সরিষার তেল; মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক

ভিটামিন ও মিনারেল:

  • শাকসবজি ও মৌসুমি ফল; রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

  • পানি; হজম ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য

৩) সাধারণ পুষ্টিহীনতার সমস্যা-

  • খর্বতা ও ওজন কম থাকা

  • ঘন ঘন অসুস্থ হওয়া

  • মনোযোগের অভাব ও পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া

  • কৈশোরে হরমোনজনিত জটিলতা

৪) যেসব খাবার সীমিত করা জরুরি-

  • অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও জাঙ্ক ফুড

  • অতিরিক্ত চিনি ও সফট ড্রিংকস

  • অতিরিক্ত তেল ও ভাজাপোড়া

৫) অভিভাবকদের ভূমিকা-

  • ঘরে পুষ্টিকর খাবারের পরিবেশ তৈরি

  • শিশুদের খাবার নিয়ে ইতিবাচক অভ্যাস গড়ে তোলা

  • খাবার নিয়ে জোর না করে সচেতনতা তৈরি

  • স্কুল টিফিনে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া

কুইক গাইড: দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের উদাহরণ

সকাল: দুধ, ডিম, রুটি বা চিড়া

দুপুর: ভাত/রুটি, ডাল, সবজি, মাছ/মাংস

বিকাল: ফল বা দই

রাত: হালকা কিন্তু পুষ্টিকর খাবার

চূড়ান্ত কথা

শিশু ও কিশোরদের সুষম পুষ্টি নিশ্চিত করা মানে কেবল আজকের সুস্থতা নয়, আগামী দিনের সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তোলা। পরিবার, স্কুল ও সমাজ—এই তিন স্তরে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। পুষ্টিতে বিনিয়োগই ভবিষ্যতের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ।