স্বাস্থ্য

অসুখের আগে সচেতনতা: জনস্বাস্থ্য কেন এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক

হাসপাতাল, ডাক্তার আর ওষুধ, এই তিনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। আধুনিক বিশ্বে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র হয়ে উঠেছে জনস্বাস্থ্য সচেতনতা। কারণ, রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা নয়। রোগ হওয়ার আগেই প্রতিরোধই জনস্বাস্থ্যের মূল দর্শন।

অথচ আমাদের সমাজে এখনও স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতার ঘাটতি ভয়াবহভাবে প্রকট।

জনস্বাস্থ্য কী এবং কেন এটি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য থেকে আলাদা

জনস্বাস্থ্য শুধু একজন মানুষের শরীর সুস্থ রাখার বিষয় নয়; এটি একটি সমাজ, একটি শহর কিংবা পুরো দেশের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাঠামো।

পরিচ্ছন্ন পানি, নিরাপদ খাদ্য, টিকাদান, বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ, স্যানিটেশন, রোগ প্রতিরোধ।

সবই জনস্বাস্থ্যের অন্তর্ভুক্ত।

একজন মানুষ অসচেতন হলে শুধু সে-ই অসুস্থ হয় না; তার মাধ্যমে পুরো সমাজ ঝুঁকিতে পড়ে।


সচেতনতার অভাবে যেসব জনস্বাস্থ্য সংকট বাড়ছে-

১) সংক্রামক রোগের পুনরুত্থান

ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, এসব রোগ নতুন নয়। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এগুলো প্রতিবছর নতুন করে মহামারির রূপ নিচ্ছে।

  • বাসাবাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি

  • মশা নিধনে অনীহা

  • জ্বর হলে দেরিতে চিকিৎসা নেওয়া

এসবই রোগ ছড়ানোর বড় কারণ।


২) টিকাদান নিয়ে ভুল ধারণা

ভ্যাকসিন নিয়ে গুজব, ভয় ও অজ্ঞতার কারণে অনেকেই টিকা নিতে অনাগ্রহী। ফলে প্রতিরোধযোগ্য রোগও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে- যা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের জন্য হুমকি।


৩) নিরাপদ খাদ্য ও পানির সংকট

খোলা খাবার, ভেজাল খাদ্য, অপরিশোধিত পানি, এসব কারণে বাড়ছে-

  • পেটের অসুখ

  • লিভার ও কিডনি সমস্যা

  • দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া

এখানে সচেতন ভোক্তা হওয়াই প্রথম প্রতিরক্ষা।


৪) বায়ুদূষণ ও পরিবেশগত স্বাস্থ্যঝুঁকি

শহরাঞ্চলে দূষিত বাতাস শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসতন্ত্র ধ্বংস করছে নীরবে। হাঁপানি, সিওপিডি, হৃদরোগ, সবকিছুর পেছনে পরিবেশগত জনস্বাস্থ্য সংকট বড় ভূমিকা রাখছে।

জনস্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে কী করা জরুরি-

ব্যক্তিগত পর্যায়ে:

  • হাত ধোয়া ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

  • অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক পরিহার

  • অসুস্থ হলে নিজে ও অন্যদের সুরক্ষায় সচেতন হওয়া


পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে:

  • শিশুদের টিকা নিশ্চিত করা

  • আশপাশ পরিষ্কার রাখা

  • স্বাস্থ্য গুজব প্রতিরোধ করা

  • নারীর স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যে গুরুত্ব দেওয়া


রাষ্ট্র ও নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে:

  • জনসচেতনতা ক্যাম্পেইন জোরদার

  • নিরাপদ খাদ্য ও পানির তদারকি

  • পরিবেশ ও বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ

  • প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি

করোনার শিক্ষা: সচেতনতা ছাড়া স্বাস্থ্য নিরাপত্তা অসম্ভব

করোনা মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে- শুধু হাসপাতাল বাড়ালেই স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় না। মাস্ক, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব, এসব ছোট অভ্যাসই লাখো জীবন বাঁচিয়েছে। এই অভ্যাসগুলো যদি নিয়মিত জনস্বাস্থ্যের অংশ হতো, ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হতো।

চূড়ান্ত কথা

জনস্বাস্থ্য কোনো একক ব্যক্তির দায়িত্ব নয়, এটি সম্মিলিত সচেতনতার ফল। আজকের ছোট অবহেলা আগামী দিনের বড় সংকটে রূপ নিতে পারে। তাই স্বাস্থ্য সুরক্ষার লড়াই শুরু হোক ঘর থেকে, পরিবার থেকে, সমাজ থেকে।

কারণ, সচেতন সমাজই সুস্থ সমাজ।