স্বাস্থ্য

ভেজাল খাদ্য ও দূষিত পানি: "জনস্বাস্থ্যের ক্রমবর্ধমান হুমকি”

নিজস্ব প্রতিবেদক

খাবার খাওয়া মানেই পুষ্টি গ্রহণ, এই সাধারণ ধারণাটাই আজ প্রশ্নের মুখে। প্রতিদিন আমরা যা খাচ্ছি বা পান করছি, তার কতটা নিরাপদ? এই প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর দিতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরাও।

ভেজাল খাদ্য, দূষিত পানি ও অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থার কারণে নিরাপদ খাদ্য ও পানির সংকট এখন নীরব জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় হয়ে উঠেছে।

নিরাপদ খাদ্য কেন জনস্বাস্থ্যের মূল ভিত্তি-

খাদ্য ও পানি মানবজীবনের মৌলিক চাহিদা। কিন্তু এই মৌলিক চাহিদাই যদি দূষিত হয়, তবে তার প্রভাব পড়ে-

  • শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে

  • গর্ভবতী নারীর স্বাস্থ্যে

  • দীর্ঘমেয়াদি লিভার, কিডনি ও ক্যান্সার ঝুঁকিতে

  • সামগ্রিক কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতায়

একটি অসুস্থ খাদ্যব্যবস্থা মানেই একটি অসুস্থ জাতি।

ভেজাল খাদ্য: ধীরে ধীরে শরীর ধ্বংসের রাস্তা-

বাজারে সহজলভ্য অনেক খাবারেই রয়েছে অদৃশ্য ঝুঁকি।

  • ফলে ফরমালিন,

  • মসলা ও তেলে রঙ ও রাসায়নিক,

  • দুধে ডিটারজেন্ট বা পানি,

  • মাছ-মাংসে সংরক্ষণ রাসায়নিক,

এসব উপাদান তাৎক্ষণিক অসুস্থতা না ঘটালেও শরীরে জমে দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ভেজাল খাদ্য গ্রহণে বাড়ছে-

  • লিভার সিরোসিস

  • কিডনি বিকল

  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতা

  • ক্যান্সারের ঝুঁকি

পানির সংকট: পরিষ্কার দেখালেই নিরাপদ নয়

  • শহর ও গ্রাম, দুই জায়গাতেই নিরাপদ পানির সংকট প্রকট।

  • অনেক এলাকায় টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক

  • শহরে পাইপলাইনের পানিতে ব্যাকটেরিয়া ও ভারী ধাতু

  • অপরিশোধিত বোতলজাত পানিতে মাইক্রোবিয়াল ঝুঁকি

ফলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, কৃমি সংক্রমণ, এসব রোগ এখনও জনস্বাস্থ্যের বড় চ্যালেঞ্জ।

কারা সবচেয়ে ঝুঁকিতে-

শিশু ও নবজাতক : দূষিত খাবারে অপুষ্টি ও রোগ

গর্ভবতী নারী: দূষণ সরাসরি ভ্রূণের ওপর প্রভাব ফেলে

বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগী: সংক্রমণ দ্রুত মারাত্মক আকার নেয়

নিম্নআয়ের মানুষ: নিরাপদ খাবারের বিকল্প কম

সচেতনতার অভাবই সবচেয়ে বড় দুর্বলতা

আইন আছে, কর্তৃপক্ষ আছে, তবুও সংকট কেন?

কারণ-

  • ভোক্তার অসচেতনতা

  • কম দামে বেশি কেনার প্রবণতা

  • খাবার সংরক্ষণ ও রান্নায় স্বাস্থ্যবিধি না মানা

  • অভিযোগ না করা বা ভয় পাওয়া

এখানেই জনস্বাস্থ্য সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি।

ভোক্তা হিসেবে কী করা জরুরি-

খাবারের ক্ষেত্রে,

  • ফল ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া

  • খোলা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার এড়িয়ে চলা

  • অস্বাভাবিক রং বা গন্ধযুক্ত খাবার না কেনা

  • ঘরে খাবার দীর্ঘদিন সংরক্ষণ না করা

পানির ক্ষেত্রে

  • পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান

  • টিউবওয়েলের পানি নিয়মিত পরীক্ষা

  • অপরিচিত বোতলজাত পানি এড়িয়ে চলা

রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্ব-

  • বাজার তদারকি জোরদার

  • খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তি

  • নিরাপদ পানি সরবরাহে অবকাঠামো উন্নয়ন

  • স্কুল পর্যায় থেকে খাদ্য সচেতনতা শিক্ষা

শেষ কথা

নিরাপদ খাদ্য ও পানি কোনো বিলাসিতা নয়, এটি মানুষের মৌলিক অধিকার। আজকের ছোট অবহেলা আগামী দিনের বড় রোগের কারণ হতে পারে। তাই এই সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজন আইন, নজরদারি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ- সচেতন নাগরিক।

কারণ, সুস্থ শরীরের শুরুটা হয় নিরাপদ প্লেট আর নিরাপদ গ্লাস থেকে।