আন্তর্জাতিক

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন উত্তেজনা

মস্কো বৈঠক ‘ইতিবাচক’, কিন্তু সমাধান এখনো দূর—মাঠে দুই পক্ষের পাল্টা হামলা অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি আবারও জটিল হচ্ছে। কূটনৈতিক আলোচনার নতুন ধাপ শুরু হলেও যুদ্ধক্ষেত্রে দুই পক্ষের সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। গত দুই দিনে মস্কোতে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশেষ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দীর্ঘ বৈঠককে “ইতিবাচক” বলে আখ্যা দিয়েছে ক্রেমলিন, কিন্তু কোনোরকম অগ্রগতি বা সমঝোতার ঘোষণা আসেনি।

বৈঠকে যুদ্ধবিরতি, নিরাপত্তা গ্যারান্টি ও দনবাস অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। রাশিয়ার দাবি, দনবাস অঞ্চল ‘যেভাবেই হোক’ তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখবে।

অপরদিকে ইউক্রেন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দখলীকৃত কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ফলে শান্তি-উদ্যোগ নিয়ে আশাবাদ তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি।

বৈঠকের সমান্তরাল সময়ে দুই দেশই মাঠে নতুন সামরিক তৎপরতা চালিয়েছে। রুশ বাহিনী জাপোরিজিয়া অঞ্চলের একটি কৌশলগত গ্রাম দখলের দাবি করেছে। অপরদিকে ইউক্রেন রাশিয়ার ভেতরে অবস্থিত দুটি তেলভান্ডারে সফল হামলার কথা জানিয়েছে, যা রুশ লজিস্টিক সরবরাহে চাপ বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাতভর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উভয় দেশের বেশ কিছু অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।

যুদ্ধের মানবিক দিকও পরিস্থিতিকে আরও ভারী করে তুলছে। শীত ঘনিয়ে আসায় বিদ্যুৎ, পানি ও জরুরি সরবরাহ—এসবের ওপর নতুন চাপ দেখা দিয়েছে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সাধারণ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হচ্ছে; অনেক এলাকায় হাসপাতাল ও যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক সহায়তার জন্য নতুন একটি তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। রাশিয়ার স্থগিত সম্পদ ব্যবহার—এই প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক চলছে, কারণ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ আইনগত ঝুঁকির কথা বলছে। তবে ইউক্রেন বলছে—যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনে এই সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সব মিলিয়ে, যুদ্ধ থামানোর জন্য যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে তা এখনও অনিশ্চয়তায় ঘেরা। সামরিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে কোনো “দ্রুত সমাধান” দৃশ্যমান নয়। আপাতত সামনে যে চিত্রটি পরিষ্কার—তা হলো দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি নয়, আর সেই কারণে সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।