ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে ভূখণ্ড সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে বলে স্বীকার করেছেন ট্রাম্প।
আজ (২৯ ডিসেম্বর) সোমবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, ফ্লোরিডার মার-আ-লাগোতে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে উভয় নেতা আলোচনাকে ‘দারুণ’ বলে উল্লেখ করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ বন্ধে অগ্রগতি হলেও ‘দু-একটি জটিল বিষয়’ এখনও রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভূমি বা ভূখণ্ডের প্রশ্ন।
জেলেনস্কি জানান, ২০ দফার শান্তি প্রস্তাবের প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত এগিয়েছে।
বৈঠকের পর টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, আমরা সব ইস্যুতেই অর্থবহ আলোচনা করেছি। গত কয়েক সপ্তাহে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, সেটিকে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আগামী সপ্তাহে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আবারও আলোচনায় বসবেন।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল নিয়ে আলোচনা এখনো জটিল পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এই অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকৃত এলাকা ঘোষণার প্রস্তাব এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
দনবাস অঞ্চলের দোনেৎস্কের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং লুহানস্কের প্রায় ৯৯ শতাংশ এলাকা বর্তমানে রাশিয়ার দখলে। রাশিয়া চায়, যেখানে এখনো ইউক্রেনের উপস্থিতি আছে সেখান থেকেও ইউক্রেনীয় বাহিনী সরে যাক। বিপরীতে কিয়েভ চায় অঞ্চলটিকে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে একটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে।
ইউক্রেনের হারানো ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ট্রাম্প বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বরে তিনি ইউক্রেন সেই ভূখণ্ড ফেরত পেতে পারে বলে মন্তব্য করে পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেন।
নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, বিষয়টি অনেকটাই চূড়ান্ত হলেও ভবিষ্যৎ হামলা ঠেকাতে সেনা মোতায়েন বা লজিস্টিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক অঙ্গীকার করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা ‘যথাসময়ে’ হতে পারে।
এদিকে এর আগে ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইয়ুরি উশাকভ জানান, ওই ফোনালাপে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউক্রেনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবগুলো ক্রেমলিন শুনেছে এবং উভয় নেতা একমত হয়েছেন যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করতে পারে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, জানুয়ারিতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন দফার আলোচনার প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।