দক্ষিণ এশিয়ার চিরবৈরি প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান আগামী বছর ফের যুদ্ধে জড়াতে পারে। এক প্রতিবেদনে এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্কট্যাংক প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স (সিএফআর)।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা এবং সংঘর্ষ বৃদ্ধির পেছনে ‘উচ্চমাত্রার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ’ অন্যতম কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি এ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, যুদ্ধের অন্যতম কারণ— দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বৃদ্ধি।
বিশেষজ্ঞদের বরাতে সিএফআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৬ সালে আবারও দুই দেশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতে পরিণত হতে পারে, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে বিপদে ফেলবে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় শাসনামলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটানোর চেষ্টা করেছিল। তার মধ্যে ছিল ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের অবসানও, কিন্তু বাস্তবে এই পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। ভারত এবং পাকিস্তান দুটো পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, তাই তাদের মধ্যে যেকোনো সামরিক সংঘর্ষ পুরো বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে দিতে পারে।
এছাড়া, গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যে একটি সামরিক সংঘর্ষ ঘটে। ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সিঁদুর’ পরিচালনা করে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালায়, যার ফলে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী ক্যাম্প ধ্বংস হয়।
পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালায়। তবে, দুই দেশের মধ্যে পরে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যখন পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
তবে, এটি পুরো পরিস্থিতির সমাপ্তি নয়। সিএফআর-এর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষত, ২০২৬ সালে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে, যা সীমান্তবর্তী সন্ত্রাসী হামলা এবং আফগানিস্তানে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঘটতে পারে।
সিএফআর আরও সতর্ক করেছে, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা বেড়ে গেলে, ২০২৬ সালে আফগানিস্তান এবং পাকিস্তান দুই দেশের মধ্যে ‘মাঝারি মাত্রার’ সশস্ত্র সংঘাত শুরু হতে পারে, যা পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এবং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা অনেকটাই নির্ভর করছে দুই দেশের মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পরিমাণ এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।
সিএফআর এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছে, দুই দেশকে একে অপরের প্রতি উত্তেজনা কমানোর জন্য যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে, অন্যথায় পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
এখনও পর্যন্ত, ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য কিছু সামরিক আলোচনার পথ তৈরি হয়েছে। তবে, সিএফআর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় এবং স্থিতিশীল কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রয়োজন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে এবং এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।