রাশিয়া জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৫ ঘণ্টার বৈঠকেও কোনো সমঝোতা হয়নি। মঙ্গলবার রাতে ক্রেমলিনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার।
বৈঠক চলার পরও কোনো অগ্রগতি না হওয়ার কথা জানিয়েছেন পুতিনের শীর্ষ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। তিনি বলেন, ‘এখনও সমঝোতা পাওয়া যায়নি। আমাদের আরও অনেক কাজ বাকি।’
উশাকভ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কিছু প্রস্তাব পুতিন নেতিবাচকভাবে নিয়েছেন। বৈঠকের পর উইটকফ যুক্তরাষ্ট্রের মস্কো দূতাবাসে গিয়ে হোয়াইট হাউসকে ব্রিফ করেন। তিনি আরও বলেন, পুতিন ও ট্রাম্পের বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই, তবে আলোচনাগুলো ছিল গঠনমূলক এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের সম্ভাবনাও বড়।
তিনি জানান, আলোচনায় ‘ভৌগোলিক সমস্যার’ কথাও এসেছে—যা রাশিয়ার দাবিকৃত দনবাস অঞ্চলের বিষয়। যদিও এ অঞ্চলের অন্তত ৫ হাজার বর্গকিমি এলাকায় ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় সব দেশই দনবাসকে ইউক্রেনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
উশাকভ বলেন, ‘কিছু মার্কিন প্রস্তাব আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, আবার কিছু আমাদের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। তাই আলোচনা চলবে।’
রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী উইটকফ ও কুশনার লেনিনের সমাধিস্তম্ভ পেরিয়ে হেঁটে ক্রেমলিনে প্রবেশ করেন এবং দোভাষীর মাধ্যমে পুতিন, উশাকভ ও রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
ওয়াশিংটনে ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের লোকজন রাশিয়ায় আছে—দেখছে শান্তি আনা সম্ভব কি না। সহজ কিছু নয়, বড় জটিল অবস্থা।’ তিনি দাবি করেন, যুদ্ধটিতে প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষের হতাহত হচ্ছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়া–পশ্চিমের সম্পর্ক শীতল যুদ্ধের পর সবচেয়ে সংকটময় অবস্থায় পৌঁছায়।
এর মধ্যে নভেম্বরের দিকে মার্কিন শান্তি প্রস্তাবের একটি খসড়া ফাঁস হলে ইউক্রেন ও ইউরোপের দেশগুলো উদ্বেগ জানায়। পরে জেনেভায় আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন একটি ‘হালনাগাদ শান্তির খসড়া কাঠামো’ তৈরি করে।
ডাবলিনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, মস্কোতে কী আলোচনা হয় সেটিই এখন মূল বিষয়। তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন—যুক্তরাষ্ট্র যেন শান্তি প্রক্রিয়ায় আগ্রহ হারিয়ে না ফেলে। ‘সবকিছু ন্যায়সংগত ও প্রকাশ্য হওয়া জরুরি। ইউক্রেনের পেছনে লুকিয়ে কোনো খেলা চলতে পারে না,’ বলেন তিনি।
উইটকফের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগে পুতিন বলেন, রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না। তবে ইউরোপ যদি যুদ্ধ শুরু করে, ‘তা এমন দ্রুত শেষ হবে যে পরে আলোচনার মতো কেউ থাকবে না।’ তিনি আরও হুমকি দেন, ইউক্রেন কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার ট্যাংকারে ড্রোন হামলা অব্যাহত রাখলে তাদের সমুদ্রপথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা বলেন, পুতিনের এই মন্তব্যই প্রমাণ করে—তিনি এখনো যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত নন।
সূত্র: রয়টার্স