ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে কঠোর বিবৃতি দিয়েছে বিশ্বের ২৫টি দেশ। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে যৌথ এই বিবৃতিতে দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজাবাসীর দুর্ভোগ “নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে” এবং এই যুদ্ধ এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সোমবার দেওয়া ওই বিবৃতিটি মূলত এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন গাজায় যুদ্ধ চলছে প্রায় ২১ মাস ধরে। এতে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির ওপর ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “গাজায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। যুদ্ধ এখনই বন্ধ হওয়া দরকার”। এছাড়া যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা, হামাসের হাতে বন্দি থাকা ব্যক্তিদের মুক্তি এবং জরুরি সহায়তা প্রবাহে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে যুদ্ধের সময় মানবিক সহায়তা ধীর গতিতে সরবরাহ, শিশু ও সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং খাদ্য-পানির মতো ন্যূনতম প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে নিহত হওয়ার ঘটনাকে ‘অমানবিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
জাতিসংঘ ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, মে মাসের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৮৭৫ জন ফিলিস্তিনি খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল মে মাসের শেষের দিকে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা পূর্ণ অবরোধ কিছুটা শিথিল করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েল যে কায়দায় সহায়তা সরবরাহ করছে, তা বিপজ্জনক। এটা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে এবং গাজাবাসীর মানব মর্যাদাকে ধ্বংস করছে। বেসামরিক জনগণের কাছে জরুরি মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে না দেওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় তার দায়িত্ব পালন করতে হবে।”
আল জাজিরার লন্ডন প্রতিনিধি সোনিয়া গালেগো বলেন, “এটি ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। শুধু ইউরোপ নয়, এর বাইরেও একটি বড় আন্তর্জাতিক ঐক্য দেখা যাচ্ছে।”
তিনি জানান, আগে শুধু ইউরোপের দেশগুলোই সমালোচনায় সরব ছিল, এখন অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, এমনকি জাপানের মতো দেশগুলোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে।
বিবৃতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হয় এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে আন্তর্জাতিক সহায়তার কথা বলা হয়।
অবশ্য হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চললেও এখনো কোনো কার্যকর সমঝোতা হয়নি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একাধিকবার বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চালু রাখলেই হামাসকে চাপ দেওয়া যাবে।
এদিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দেওয়া এক বক্তব্যে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “এই যুদ্ধের কোনও সামরিক সমাধান নেই। পরবর্তী যুদ্ধবিরতিই হতে হবে শেষ যুদ্ধবিরতি”। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরকে এই সঙ্কট নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।