ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া শান্তি আলোচনায় বসার পরিবর্তে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও জেলেনস্কিকে এক টেবিলে বসানোর চেষ্টা করছেন। তবে তিনি শুক্রবার বলেন, ‘এটা তেলের সঙ্গে ভিনেগার মেশানোর মত তাদের মধ্যে সম্পর্ক একেবারেই ভালো নয়।’
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ অবশ্য দাবি করেছেন, এজেন্ডা প্রস্তুত হলে পুতিন বৈঠকে বসতে রাজি। তবে, জেলেনস্কি সব প্রস্তাবই নাকচ করছেন বলে অভিযোগ তার।
বিবিসি জানিয়েছে, গত সপ্তাহে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে এবং ওয়াশিংটনে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেন, এ যুদ্ধ বন্ধ করাই তার সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, যেখানে তিনি যোগ দেবেন।
জেলেনস্কি বৈঠকে রাজি হলেও পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইছেন। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন কোনো বৈঠক ভয় পায় না। ভয় পায় রাশিয়া।’
কিয়েভ সফরে ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে জানান, ট্রাম্প অচলাবস্থা ভাঙতে চান। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মিলে এমন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা তৈরির কাজ করছে, যাতে ভবিষ্যতে রাশিয়া আর কখনও ইউক্রেন আক্রমণের সাহস না পায়। জেলেনস্কি ন্যাটোর ৫ নম্বর অনুচ্ছেদের মতো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চান, যেখানে এক দেশের ওপর হামলা মানেই সব সদস্য রাষ্ট্রের ওপর হামলা ধরা হয়।
অন্যদিকে ল্যাভরভ দাবি করেন, ওয়াশিংটনে ইউক্রেন কোনো নমনীয়তা দেখায়নি। তিনি অভিযোগ করেন, ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগ না দেওয়া ও সীমান্ত ইস্যুতে আলোচনা চালানো জরুরি। কিন্তু জেলেনস্কি সবকিছুতেই ‘না’ বলেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া ক্যালাস অবশ্য সতর্ক করে বলেছেন, পুতিন ভূখণ্ড ছাড়ের প্রস্তাব দিয়ে ফাঁদ তৈরি করছেন। তিনি বলেন, ‘আসলে এক ইঞ্চি ছাড়ও রাশিয়া দেয়নি, তারাই আগ্রাসী।’
এদিকে বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ হামলার একটি চালিয়েছে রাশিয়া। এক রাতেই ৫৭৪টি ড্রোন ও ৪০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তারা। জবাবে ইউক্রেনের ড্রোন রাশিয়ার ব্রায়ান্স্ক অঞ্চলে একটি তেল পাম্পিং স্টেশন উড়িয়ে দিয়েছে। এতে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, যা ওই পাইপলাইনের গত নয় দিনে তৃতীয় হামলা।
হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়া তেল সরবরাহে এ পাইপলাইনের ওপরই নির্ভরশীল। হাঙ্গেরি জানিয়েছে, সরবরাহ স্বাভাবিক হতে অন্তত পাঁচ দিন লাগতে পারে। বিষয়টি নিয়ে তারা ইউরোপীয় কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে।
ইইউ ২০২২ সালে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর থেকে রাশিয়ার জ্বালানি নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে রুশ তেল-গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করতে চায়।