রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে বাড়ছে কিশোর গ্যাং এর প্রভাব

 
অপরাধ

কিশোর গ্যাং: ছোট বয়স, বড় অপরাধ-ঝুঁকি

মাদক, অস্ত্র, টিকটক লাইভ, সব মিলিয়ে উঠতি কিশোরদের ভয়ংকর নতুন অপরাধ চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভূমিকা-

শহর–মফস্বলের পাড়া–মহল্লায় কিশোরদের ছোট ছোট দল এখন বড় অপরাধের হুমকি হয়ে উঠছে। পরিচিত শব্দ—‘কিশোর গ্যাং’। স্কুল–কলেজপড়ুয়া কিশোরদের একটি অংশ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দল তৈরি করে চলছে আধিপত্য, চাঁদাবাজি, মারামারি, ছিনতাই থেকে শুরু করে এলাকাভিত্তিক “শো–অফ” অপরাধ।


১) কিভাবে গঠিত হয় গ্যাং?

  • বন্ধুত্ব-ভাই ভাই টাইপ ক্লিক → পরে ‘টিম’, ‘গ্রুপ’ ।

  • অনলাইন পরিচয় → ফেসবুক গ্রুপ, টিকটক টিম

  • এলাকাভিত্তিক আধিপত্য → কারা কোন এলাকায় “বলশালী” হিসেবে পরিচিত

  • একজন বড় ভাই / দাদা → যাকে তারা ‘লিডার’ ভাবে, অপরাধে উৎসাহ দেয়

গ্যাংয়ের মাধ্যমে তারা পায় পরিচিতি, ভয় দেখানোর ক্ষমতা এবং ‘হিরো’ ভাব।

২) কী ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে?

🔹 টিকটক–লাইভ গ্যাং শো

লাইভে এসে গ্যাং পরিচয়, অস্ত্র দেখানো, হুমকি–দেওয়ার অভিনয়, ভিউ বাড়ানোর প্রতিযোগিতা

🔹 ছিনতাই–চাঁদাবাজি

পথচারী বা স্কুলছাত্রদের টার্গেট

“এলাকায় চললে আমাদের নিয়ম মানতে হবে” ধরনের চাপ

🔹 দলে সংঘর্ষ

সামান্য মন্তব্য, মেয়ে নিয়ে বিবাদ, অনলাইনে ঝামেলা → পরে রিয়েল লাইফ মারামারি

🔹 মাদক বহন / সরবরাহ

বড় চক্রের লোকেরা কিশোরদের ব্যবহার করে,

কারণ: কম বয়স, পুলিশের নজর কম, শাস্তি কম হওয়ার ধারণা

বয়স কম হওয়ায় মাদক দিয়ে কেনা হয় মস্তিস্ক

৩) পরিবার ও সমাজ কেন বুঝতে পারে না?

  • ফোনে কী করছে—নজর দেওয়ার অভাব

  • রাতের পর বাইরে থাকা নিয়ে শিথিলতা

  • ‘ছোট বাচ্চা, কিছু হবে না’—এই ভুল ধারণা

অনলাইন–অফলাইনে দুই জীবনের তৈরি বিভাজন

গুরুত্বপূর্ণ: বেশিরভাগ অভিভাবকই টের পান তখন, যখন সন্তান পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বা কোনো বড় ঘটনার সাথে যুক্ত হয়।


৪) কারা টার্গেটে পড়ে?

  • স্কুল–কলেজপড়ুয়া সাধারণ কিশোররাই সবচেয়ে ঝুঁকিতে

  • যারা পরিবারে কম মনোযোগ পায়

  • নিম্ন–মধ্যবিত্ত, ঘনবসতিপূর্ণ পাড়া

  • সামাজিক স্বীকৃতি কম- গ্যাং পরিচয়কে ‘খ্যাতি’ মনে করে

৫) পুলিশের বর্তমান পর্যবেক্ষণ

  • কিশোরদের মধ্যে হঠাৎ অপরাধ প্রবৃদ্ধি

  • টিকটক ও ফেসবুকে গ্যাং আইডেন্টিটি—আইনি পর্যবেক্ষণের বাইরে

  • আগের ছিনতাই–চক্রের জায়গা এখন কিশোরদের দখলে

  • গ্যাংয়ের লিডাররা প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের সাথে যুক্ত

৬) মনোবিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ

  • পরিচয় সংকট

  • পরিবারে মনোযোগের ঘাটতি

  • বড় হওয়ার তাড়না

  • অনলাইনে নকল হিরো সংস্কৃতি

ফলাফল:  তারা ভাবে “একটু দেখালেই সমস্যা নেই”, কিন্তু অল্পতেই বড় অপরাধে ঢুকে যায়।


৭) প্রতিরোধে কী করা জরুরি? (অভিভাবক–সমাজ–বিদ্যালয়)

অভিভাবক-

  • সন্তানের বন্ধুবান্ধব/রাতের চলাফেরা খেয়াল করা

  • ফোন–ইন্টারনেট ব্যবহার নজরদারি

  • নিয়মিত কথা বলা- “তুই কি কোনো দলের সাথে থাকিস?”

বিদ্যালয়-

  • হঠাৎ অনুপস্থিতি, আচরণ বদলে যাওয়া- প্রায়োরিটি চিহ্ন

  • স্কুল গেটের বাইরে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ

  • সমাজ ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ

  • পাড়া–স্তরের নজরদারি

  • খেলার মাঠ/সাংস্কৃতিক কার্যক্রম বাড়ানো

  • ছোট দলভিত্তিক অপরাধ দেখলেই গুরুত্ব দেওয়া

মাদকেই সর্বনাশ কিশোরদের

৮) কিশোর গ্যাং কেন এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি?

  • বয়স কম → আইন–প্রক্রিয়া তুলনামূলক শিথিল

  • অনলাইনে দ্রুত প্রভাব ছড়ানো

  • ছোট ভুল কয়েক মাসেই বড় অপরাধে রূপ নেয়

  • গ্যাং সংস্কৃতি সামাজিক নিরাপত্তাকে অস্থিতিশীল করে

শেষ কথা-

কিশোর গ্যাং কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—এটি এক ধরনের সামাজিক মহামারি। সময়মতো হস্তক্ষেপ না করলে আগামী কয়েক বছরে এই চক্রই হয়ে উঠতে পারে দেশের বড় অপরাধ–চক্রের প্রধান নিয়োগ–কেন্দ্র।