ফ্যাশন সচেতন প্রজন্ম শুধু স্টাইল নয়, পরিবেশকে নিরাপদ রাখার দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে
আজকের ফ্যাশন সচেতন প্রজন্ম শুধু স্টাইল নয়, পরিবেশকে নিরাপদ রাখার দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে।
ফ্যাশন আর শুধু বাহারি পোশাক বা ট্রেন্ডি লুক নয়—এখন এটি সামাজিক ও পরিবেশগত দায়বদ্ধতার প্রতীক। ফাস্ট ফ্যাশন আমাদের চারপাশের পরিবেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় এসেছে সস্টেইনেবল ফ্যাশন—পরিবেশ বান্ধব কাপড়, টেকসই ডিজাইন এবং সচেতন পছন্দ। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মও এই সচেতনতার সঙ্গে ফ্যাশনকে নতুন রূপ দিচ্ছে।
১. কেন সাস্টেইনেবল ফ্যাশন জরুরি?
ফাস্ট ফ্যাশনের প্রভাব: প্রচুর বর্জ্য, জল ও মাটির দূষণ, কার্বন ফুটপ্রিন্ট বৃদ্ধি।
পরিবেশ বান্ধব বিকল্প: অর্গানিক কটন, হেম্প, রিসাইকেলড ফ্যাব্রিক কম দূষণ সৃষ্টি করে।
ব্যবহারকারীর দায়িত্ব: সচেতন পছন্দের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ রক্ষায় সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারি।
২. কিভাবে বেছে নেওয়া উচিত পোশাক?
অর্গানিক কটন ও হেম্প: রাসায়নিকের ব্যবহার কম, দীর্ঘস্থায়ী এবং পরিবেশ বান্ধব।
রিসাইকেলড ফ্যাব্রিক: পুরনো কাপড়, প্লাস্টিক ও বর্জ্য থেকে তৈরি ফ্যাব্রিক।
লোকাল ব্র্যান্ডের সমর্থন: স্থানীয় কারিগরদের কাজকে উৎসাহিত করে, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য ভালো।
DBL এর EXport Consignment
৩. ফ্যাশনেবলভাবে পরিবেশ সচেতন থাকা-
*স্টাইল টিপস: মাল্টিফাংশনাল পোশাক বেছে নিন, একই পোশাকে ভিন্ন লুক তৈরি করুন।
*অ্যাকসেসরিজে প্রাকৃতিক উপাদান: কাঠ, বাম্বু, জুট বা রিসাইকেলড মেটাল।
*সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ড: #পরিবেশবান্ধবফ্যাশন, #EcoFashion, #SustainableStyle
৪. ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি-
ফ্যাশন শুধু লুক নয়, এটি সামাজিক দায়িত্বের প্রতীক।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্র্যান্ড ও ডিজাইনাররা টেকসই ডিজাইনকে উৎসাহিত করছে।
সচেতন ক্রেতা হিসেবে আমরা পরিবর্তনের অংশ হতে পারি, যা পরিবেশ ও সমাজ উভয়ের জন্য উপকারী।
বাংলাদেশে সাস্টেইনেবিলিটি নিয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ করা একটি গ্রুপ, DBL-এর সাস্টেইনেবিলিটি (টেকসই / দায়িত্ববান) উদ্যোগ -
DBL, “Sustainability 5.0 Strategy” নামে একটি কাঠামোগত পরিকল্পনা চালায়, যা পাঁচটি স্তম্ভে (pillars) বিভক্ত-
🔹 পাঁচটি স্তম্ভ-
People (মানুষ)- কর্মচারী এবং শ্রমিকদের সুস্থতা, অধিকার, উন্নয়ন ও যত্নস্বাস্থ্য–হাইজিন, নারী শ্রমিকদের জন্য সহায়ক নীতি, দারিদ্র্য/ বিকল্প সহায়তা ইত্যাদি।
Process (প্রক্রিয়া)- উৎপাদন প্রক্রিয়া, দক্ষতা, ম্যানেজমেন্ট উন্নয়নকাজের দক্ষতা, কাজের পরিবেশ উন্নয়ন, প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণ।
Product (পণ্য)- পণ্যের ডিজাইন, উপাদান, উৎপাদন পদ্ধতি, মান এবং পরিবেশবান্ধবতানতুন, টেকসই বা কম‑দূষণকারী ফ্যাব্রিক; রিসাইকেলড কটন বা টেক্সটাইল ব্যবহার; মেটিরিয়াল ইনোভেশন।
Community (কমিউনিটি / সমাজ)- স্থানীয় সম্প্রদায়, কর্মীদের পরিবার, সমাজকল্যাণ, শিক্ষাপ্রসার এবং গৃহস্থালায় উন্নয়নকমিউনিটি স্বাস্থ্য, সচেতনতা কর্মশালা, কমিউনিটি‑ভিত্তিক সুবিধা, সহায়তা প্রকল্প।
Environment (পরিবেশ)- জল, শক্তি, বর্জ্য, কার্বন, পরিবেশপ্রভাব কমানোপানি ব্যবস্থাপনা (ওয়াটার রিসাইকেল, ব্যবহারের পরিমাণ কমানো), শক্তি সাশ্রয়, বর্জ্য ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ, গ্রীন বিল্ডিং, কার্বন পদচিহ্ন (carbon footprint) হ্রাস।
বন্ধন I DBL
🔎DBL এর কিছু নির্দিষ্ট উদ্যোগ ও অর্জন-
DBL ২০১০-এর দশক থেকেই গার্মেন্টস উৎপাদনে “সবুজ (green) পদ্ধতি” গ্রহণ করছে ,
প্রথম দিকে তারা প্রতি কেজি ফ্যাব্রিক ধোয়ার জন্য প্রায় ১১৯ লিটার জল ব্যবহার করতো; পরে আধুনিক পদ্ধতি ও রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে এই ব্যবহার ~ ৫৫ লিটারে নামিয়ে এনেছে।
গাজীপুরে তাদের গ্রীন বিল্ডিং (LEED সার্টিফায়েড) প্রতিষ্ঠা করেছে, যেখানে প্রায় ৭,০০০ শ্রমিক কাজ করবেন।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় তারা উন্নত পন্থা অবলম্বন করেছে: বৃষ্টি-জল সংগ্রহ (rainwater harvesting), পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানি ব্যবস্থাপনা, শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি, কার্বন এবং পানি ব্যবহারের কমীকরণ।
সাম্প্রতিক (২০২৪) রিপোর্ট অনুযায়ী, তারা CDP (কার্বন ও জল ব্যবস্থাপনা‑সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী রিপোর্টিং ফ্ল্যাটফর্ম)–র W ater Report‑এ “B–” রেটিং পেয়েছে — যা গ্লোবাল গড় “C” রেটিংয়ের চেয়ে ভালো। এটি তাদের পরিবেশ সচেতনতা ও দায়বদ্ধতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
সাস্টেইনেবল ফ্যাশন নিজের স্টাইলকে আরও মূল্যবান ও অর্থবহ করে
সারাংশ-
সাস্টেইনেবল ফ্যাশন মানে শুধু পরিবেশকে রক্ষা করা নয়, এটি নিজের স্টাইলকে আরও মূল্যবান ও অর্থবহ করা। ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা পরিবেশ বান্ধব ফ্যাশনকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি—পোশাক বেছে নেওয়া মানে শুধু নিজেকে সাজানো নয়, এক সুন্দর ও টেকসই ভবিষ্যত গড়ার পথেও যাত্রা শুরু করা।