জাতীয়

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের জন্য রাষ্ট্রের ব্যর্থতাই দায়ী— বলছেন বিশ্লেষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

চব্বিশের জুলাই হত্যাকাণ্ড তদন্তে জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন পাঠিয়েছিল। তাদের তদন্তে গণঅভ্যুত্থানে এক হাজার চারশ মানুষকে হত্যার কথা উঠে আসে। তখন থেকেই ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের অফিস চালুর বিষয়টি আলোচনায়।

পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘ যাচাই বাছাইয়ের পর সরকার এই অফিস স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। এরপর পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম সমঝোতা স্মারক সই করে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় পাঠান। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক তাতে সই করেন।

এর ফলে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের কাজ শুরু হয়েছে। গুলশানের ইউএন হাউজ থেকেই সংস্থাটি তাদের কার্যক্রম চালাবে। কম্বোডিয়া, ইয়েমেন, সুদান, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, লাইবেরিয়া ও প্যালেস্টাইনের গাজা ও রামাল্লামসহ অন্তত ১৬ দেশে কাজ করছে এমন অফিস। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই অফিসের কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে এসব দেশের কাতারেই কি যুক্ত হলো বাংলাদেশ?

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছেন, জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভরসা জায়গায় পৌঁছাতে পারলে মানবাধিকার কমিশনের অফিস চালুর প্রয়োজন হতো না।

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উদ্বেগ বেশি প্রকাশ করা হচ্ছে। অনেক দেশে মানবাধিকার হাইকমিশনের হস্তক্ষেপ করার প্রবণতা থাকে। সেটি বাংলাদেশের হবে কি না তা পরবর্তী সরকারের সম্পর্ক বজায় রাখার ওপর নির্ভর করবে।

তবে ঢাকায় জাতিসংঘ অফিস থাকায় আগে থেকে যেসব বাহিনী রাষ্ট্র বা সরকারি নির্দেশে গুম-খুনের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযুক্ত ও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতো তারা এখন সতর্ক থাকবে বলে জানান বিশ্লেষকরা। আগে এসব অভিযোগের ব্যাপারে জাতিসংঘকে তথ্য না দেয়া ও তাদের কর্মকর্তাদের দেশে আসার অনুমতি না দেয়ার নজিরও রয়েছে।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, মানবাধিকার কমিশনগুলো সোচ্চার থাকলেও তদন্ত ও অন্যান্য বিষয়ে রাষ্ট্রের অনীহা ছিল। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কাজ না করতে দেখা গেছে। কমিশন চালুর ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা হলেও ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবে।

ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, সরকারের কর্তৃত্ববাদী না হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এতে জবাবদিহিতা অনেকটা নিশ্চিত করা যাবে। সবসময় সরকারের ভাবনায় থাকবে যে দেশে এমন একটি অফিস রয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন হলে তা আন্তর্জাতিক মহলে তাদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।

সমঝোতা অনুযায়ী তিন বছরের জন্য ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস কাজ করবে। তারপর মেয়াদ বাড়ব কি না, সেটি তখনকার সরকার ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।