জাতীয়

৫ আগস্টের মধ্যে শহীদ ও আহতদের মর্যাদার ঘোষণা চাই: গণসংহতির জোরালো দাবিতে উত্তাল জুলাই গণসমাবেশ

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, সংবিধান সংস্কার পরিষদে নির্বাচন এবং জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জুলাই গণসমাবেশে বক্তারা শহীদ ও আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ৫ আগস্টের মধ্যে সরকারের কাছে চূড়ান্ত দাবি জানান। “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন একসাথে চলতে হবে” এবং “আগামী নির্বাচন হতে হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন” — এই দুই প্রধান দাবিতে রাজধানীতে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের সূচনা হয় শহীদ শাকিলের মায়ের হাতে উদ্বোধন ও এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে। গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সভাপতির বক্তব্যে বলেন, “৭১ থেকে ২০২৪—সব শহীদের ঋণ শোধে আমাদের ঐক্য দরকার। সরকার ব্যর্থ হয়েছে শহীদ ও আহতদের মর্যাদা দিতে, তাদের তালিকা দিতে। এতো বড় রাষ্ট্রযন্ত্র কীভাবে তা করতে অক্ষম হয়?”

তিনি বলেন, “আমরা আর লুটপাটতন্ত্রে ফিরতে চাই না। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার নাগরিক পরিচয় একটাই—আমরা বাংলাদেশের মানুষ। সবার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণসংহতির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য হাসান মারুফ রুমী, কৃষক নেতা দেওয়ান আব্দুর রশিদ নীলু, নারী সংহতির সভাপতি শ্যামলী শীল, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতারসহ অনেকে।

তাসলিমা আখতার বলেন, “আহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। সরকার সেটা পারেনি, কারণ তাদের দায়বদ্ধতা নেই।”

প্রবাসী সংহতির সমন্বয়ক সায়মা খাতুন বলেন, “আত্মত্যাগের স্মৃতি আজও জীবিত, কিন্তু সরকার তা উদযাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই শোককে নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বন্দোবস্তে রূপ দিতে হবে।”

ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, “এই সরকারের আমলে তরুণদের চাকরির নিশ্চয়তা ছিল না। তাই এই অভ্যুত্থান ঘটেছে, কিন্তু সরকার এখনো আহতদের তালিকা প্রকাশ করেনি।”

বক্তারা সরকারের ব্যর্থতা, তথ্য গোপন, দুর্নীতি এবং জনগণের প্রতি দায়হীনতার কঠোর সমালোচনা করেন। তারা দাবি করেন, পুলিশ ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার, অর্থনৈতিক ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা, এবং গণতান্ত্রিক নতুন চুক্তি ছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেই।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারী শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরাও তাদের অভিজ্ঞতা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

গণসংহতির নেতারা জানান, এই আন্দোলন শুধু রাজপথে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তা মানুষের হৃদয়ে ও সংসদে পৌঁছাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। শহীদদের রক্তের ঋণ শোধে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে এই সমাবেশ একটি নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে।