জাতীয়

ডিসেম্বরে বইমেলায় আপত্তির সুর: সরকার চাইলে সময় পুনর্বিবেচনা করবে বাংলা একাডেমি

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার একমাসের বেশি সময় এগিয়ে এনে চলতি বছরের ডিসেম্বরে বইমেলা আয়োজনের কথা জানিয়েছে বাংলা একাডেমি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রমজান মাস বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত।

তাতে প্রায় দেড় মাস আগেই সব প্রস্তুতি সারতে হবে লেখক, প্রকাশক আর আয়োজকদের। বাংলা একাডেমির এমন ঘোষণায় যেন দম ফেলার ফুরসত নেই কারও। পাণ্ডুলিপি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন প্রকাশকরা। চলছে লেখকদেরকে তাগাদা দেয়া, প্রুফ দেখা, প্রিন্টিং ও বাঁধাইয়ের কাজ।

প্রকাশকদের একাংশ অবশ্য ডিসেম্বরে বইমেলা আয়োজনের বিরুদ্ধে। তারা বলছেন, মেলা দু’সপ্তাহেরও হতে পারে, তবে আয়োজন হতে হবে ২০২৬ এর কোনও এক সুবিধাজনক সময়ে। ডিসেম্বরে বইমেলা হলে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকার কথাও ভাববেন অনেকে।

আসন্ন নির্বাচন ও রমজানকে কারণ দেখিয়ে ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে বইমেলা আয়োজনের দাবি
জানিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছিল প্রকাশকদের সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস)। চিঠিতে ছিল তিনটি সম্ভাব্য সময়ের কথাও। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি, ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি কিংবা ৫ জানুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি।

প্রথম প্রস্তাবটি গ্রহণ করে বাংলা একাডেমি। বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও বাপুসের পরিচালক আবুল বাশার ফিরোজ শেখ বলছেন, সবপক্ষের সাথে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায় বাপুসের নির্বাচনে পরাজিত একটি পক্ষ।

তিনি বলেছেন, তারা আমাদের সাথে নির্বাচনে পরাজিত হইছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী নির্বাচনে যারা পরাজিত হয়, তারা বিজয়ী প্রার্থীদেরকে সারাবছর সমস্যায় রাখে। আরেকটা দিক, বিপ্লবোত্তর সময়ে সে সমস্ত ভুঁইফোড় সংগঠনগুলো গড়ে ওঠে ওই সংগঠনগুলোর ভেতরে পুরনো জার্ম থাকে।

বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে, যেকোনও সময়েই বইমেলা আয়োজনে প্রস্তুত তারা। সরকার যদি আবারও সময় পরিবর্তন করে তাতে আপত্তি থাকবে না একাডেমির। এবারও আগের মতোই বৃহৎ পরিসরে বইমেলা হবে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বললেন, বাংলা একাডেমি তো বলতে পারে না যে আমরা এই সময় মেলা করবো। এটা তো প্রকাশকদের ব্যাপার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর ব্যাপার। ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা এগিয়ে আনলে বাংলা একাডেমির কী লাভ? এজন্য তো অনেকগুলো কাজে পরিবর্তন করতে হচ্ছে। আমাদের এজিএমের সময় পরিবর্তন করতে হচ্ছে। মানে পুরোটাই তো ক্ষতি। কিন্তু সবার যে সমস্যা হচ্ছে এবং তা প্রকাশ করছে সেটা খুবই সত্য। এটা সরকার বিবেচনায় নিয়ে যদি সময় পরিবর্তনের জন্য আমাদেরকে আবার বলে আমরা সেটাও পুনর্বিবেচনা করতে পারি।

এদিকে, মেলায় বই আনতে হাত ছুটিয়ে লিখতে ব্যস্ত লেখকরা। তবে অনেকেই মনে করছেন, মেলায় উল্লেখযোগ্য হারে ভাটা পড়বে পাঠকের। বিক্রি হবে কম, এই চিন্তা থেকে অনেকেই আনবেন না নতুন বই। তাড়াহুড়ো করে পাণ্ডুলিপি জমা দিলে সাহিত্যের মানও ধরে রাখা কঠিন হবে।

লেখক কিঙ্কর আহসান বলেছেন, মানুষের হাতে টাকা নেই, তারা অভ্যস্ত ফেব্রুয়ারিতে মেলায় যেতে। লেখকরা তাড়াহুড়া করে কোনও রকমে পাণ্ডুলিপি শেষ করার চেষ্টা করছে। এই মেলায় মানুষ কেন আসবে? ওখানে যদি বিরিয়ানি, ঝালমুড়ি এগুলোর আয়োজন করা যেতে পারে তাহলে ভিড় হবে। বইয়ের জন্য আমি ভিড় হওয়ার তেমন কোনও কারণ দেখছি না।

লেখক ও প্রকাশক নাহিদা আশরাফী বলেন, কিছু কিছু লেখক আছেন, তারা একটা মেলাকে কেন্দ্র করে চিন্তা করে রাখেন যে আমি এই মেলাতে বই করবোই। তখন হয়তো সে তার মানের দিকটা চিন্তা করবে না, পাণ্ডুলিপিটা যেমন-তেমন করে গুছিয়ে তারা চিন্তা করবে বইটা প্রকাশ করে ফেলি। সেক্ষেত্রে আসলে পাঠক ঠকছে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এখনও মেলা আয়োজনের কোনও দৃশ্যমান প্রস্তুতি চোখে পড়েনি। সময় আবার পরিবর্তন হতে পারে, এমন ধারণা থেকেই প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়নি হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে।