জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ সনদের বাস্তবায়নকেই অনিশ্চয়তার মুখে ফেলছে বলে অভিযোগ করেছে গণসংহতি আন্দোলন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক যৌথ বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এ মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কিছু সুপারিশ কমিশনের নিজস্ব বৈঠকের আলোচনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, আবার কিছু সুপারিশ অগণতান্ত্রিক। এসব প্রস্তাব বিভ্রান্তি তৈরি করছে, যা জুলাই সনদের বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে আশঙ্কার মুখে ফেলছে। শুধুমাত্র গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়ন বা ভিন্নমতের মীমাংসার বিষয়ে কোনো ঐকমত্য তৈরি হয়নি। এ ধরনের প্রক্রিয়া অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করবে এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত জুলাই সনদে ভিন্নমতের বিষয়গুলো উল্লেখ ছিল। সেইসঙ্গে ভিন্নমত নিরসনের উপায় হিসেবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে এসব ভিন্নমত জনগণের সামনে তুলে ধরে মতামত নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশে ভিন্নমত বাস্তবায়নের কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মাসের পর মাস আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি, সেসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল না হয়েই গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাস্তবসম্মত নয়।
তারা আরও বলেন, ভিন্নমত চাপিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক নয়। এটি দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাধা সৃষ্টি করবে এবং অনৈক্য বাড়িয়ে দেবে। নির্বাচিত সংসদের কর্তৃত্ব খর্ব করে অন্তর্বর্তী সরকারের জারি করা আদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার করা হলে সেটি টেকসই হবে না।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের মূল শর্ত ছিল জনগণের অনুমোদন গ্রহণ। জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন ঘটিয়ে আগামী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের ক্ষমতা প্রদান এবং আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে সেটিকে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন হিসেবে সম্পন্ন করার প্রস্তাব তারা আগে থেকেই দিয়েছিলেন। কিন্তু কমিশন তা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় আনেনি বা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করেনি। ফলে আগামী সংসদ কীভাবে সংবিধান সংস্কারের ক্ষমতা (কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার) পাবে, সে বিষয়ে ঐকমত্য গঠিত হয়নি। বরং ঐকমত্য তৈরির প্রক্রিয়াকেই পাশ কাটানো হয়েছে।
তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনকারী দলগুলোর ঐক্যই ছিল এই গণঅভ্যুত্থান ও ঐকমত্য প্রক্রিয়ার ভিত্তি। সেই ঐক্যের মাধ্যমেই জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষর গ্রহণের মধ্য দিয়ে সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার প্রকাশ পেয়েছিল। বিচার, সংস্কার ও নির্বাচনের পথরেখা বাস্তবায়নের জন্যও আমরা সেই জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়ে আসছি।
গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ওপর আস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু ঐক্যমত্য কমিশনের সুপারিশ দেখে মনে হচ্ছে, তারা সনদ বাস্তবায়নে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। কোনো বিশেষ পক্ষকে খুশি করতে গিয়ে জাতীয় ঐকমত্যকে হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে, এমন ধারণা জনগণের ভেতরে তৈরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও জাতীয় স্বার্থের জন্য উদ্বেগজনক বলে তারা মনে করেন।
নেতৃবৃন্দ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান করতে হবে।