জাতীয়

কক্সবাজারে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা, গুলিবিদ্ধ স্থানীয় যুবকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

কক্সবাজারে বিমানবন্দরের পশ্চিমে অবস্থিত বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন একটি ঘাঁটিতে হামলা ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ প্রতিরোধে গুলিবর্ষণের ঘটনায় স্থানীয় এক যুবক নিহত হয়েছে। নিহতের নাম শাহাব কবির নাহিদ (৩০) । তিনি পাশ্ববর্তী সমিতিপাড়ার শিক্ষক মো. নাছির উদ্দিনের ছেলে।

সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সুত্র জানায়, বেলা প্রায় ১২টার দিকে সমিতিপাড়ার পার্শ্ববর্তী কুতুবদিয়া পাড়ার জাহেদ হোসেন নামের এক যুবকের সঙ্গে হেলমেট পরা নিয়ে বিমানবাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে কর্তব্যরতদের কথা-কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে জাহেদের আত্মীয়স্বজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিমানবাহিনীর নির্মাণাধীন ঘাঁটি ও কর্তব্যরত সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। থেমে থেমে প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলা ওই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ শোনা যায়। এসময় গুলিবিদ্ধ হন শিহাব কবির নাহিদ। স্থানীয় লোকজন শিহাবকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, শিহাবের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিমানবাহিনীর ঘাঁটির দিকে আসতে থাকেন। কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু, ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে লোকজনকে সরিয়ে দেন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান সাংবাদিকদের জানান, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। ঘটনাস্থলে ৫০-৬০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহী একজনকে বিমানবাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা তিনি।

পরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমানবাহিনী ঘাঁটি কক্সবাজারসংলগ্ন সমিতিপাড়ার কিছু দুর্বৃত্ত বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক আয়শা ছিদ্দিকা।

ওই এলাকাটি সমিতিপাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়াসহ ১৯টি গ্রাম-মহল্লা নিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড। ৭০ হাজার বাসিন্দার ৯০ শতাংশই জলবায়ু উদ্বাস্তু। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ঘরবাড়ি হারিয়ে কুতুবদিয়া, পেকুয়া, মহেশখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে ১ নম্বর ওয়ার্ডের খাসজমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। এদিকে, কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া লোকজনের জন্য তিন কিলোমিটার দূরে খুরুশকুলে ১৩৭টি পাঁচতলা ভবনের বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। দুই বছর আগে ২০টি ভবনে ৬০০ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে। এখন আরও ৮৫টি ভবন প্রস্তুত করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সাবোক্তগীন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, দুপুরে গুলিবিদ্ধ শিহাবকে হাসপাতালে আনার কয়েক মিনিটের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মাথার পেছনের অংশ (খুলি) উড়ে গেছে। গুলিতে নাকি ইটপাটকেলের আঘাতে মাথায় জখম হয়েছে, তা এখন নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।