শীতকালীন শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় দেশব্যাপী অগ্নিনিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি)।
এফএসসিডির মিডিয়া উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ অফিসার এম শাহজাহান সিকদার আজ বাসসকে জানান, ‘আমরা সারা দেশে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং অগ্নি নিরাপত্তা আইন ও বিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি।’
তিনি জানান, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে তারা রাজধানীতে ইতোমধ্যে ৩৬টি কৌশলগত সমাবেশের আয়োজন করেছে। আজ ধানমন্ডি ২৭ ও ৩২ নম্বর সড়ক এবং ফার্মগেট এলাকায় তিনটি কৌশলগত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
দেশব্যাপী ফায়ার ড্রিল, প্রশিক্ষণ, ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা পরিদর্শন, জনসচেতনতা কার্যক্রম এবং সন্ধ্যাকালীন প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, শীতকালে রান্নাঘর, হিটার, কয়েল বা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির অসাবধানতাপূর্ণ ব্যবহারে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম দুর্ঘটনার হার ও ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
সিকদার জানান, রাজধানীর বাইরে সন্ধ্যায় ভিডিও প্রদর্শন ও অগ্নি প্রতিরোধের প্রস্তুতি বিষয়ক মহড়া চালিয়ে গণসচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফায়ার ড্রিল, সরকারি কর্মচারী ও সাধারণ নাগরিকদের প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
এই ক্যাম্পেইনের বিশেষ লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে স্কুল-কলেজ, বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, শপিং মল, বাজার, কারখানা ও বস্তি এলাকা।
সিকদার বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি প্রতিরোধই সর্বোত্তম প্রতিকার। তাই আমরা সাধারণত জনবহুল স্থান বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশিক্ষণের জন্য বেছে নিই, যাতে মানুষ নিজ উদ্যোগে সতর্কতা অবলম্বন করে অগ্নিকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে পারে।’
এফএসসিডি পরিদর্শকরা নিয়মিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে কারখানা পরিদর্শন করছেন এবং যেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত, সেখানে আইনানুগ নোটিশ দিচ্ছেন
ফায়ার সার্ভিস জনগণকে বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখার পরামর্শ দিচ্ছে এবং ছোট আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফায়ার সার্ভিসকে তাৎক্ষণিকভাবে জানানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
রাজধানীতে রাজউক এবং সারাদেশে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। সিকদার বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা নির্ভর করে প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটদের ওপর।’
তিনি জানান, মোবাইল কোর্টের বেশিরভাগই ঢাকা বিভাগে পরিচালিত হচ্ছে এবং বাণিজ্যিক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো এই অভিযানের মূল লক্ষ্য, কারণ শীতে এসব স্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেশি ঘটে।
অগ্নি নির্বাপণ বিশেষজ্ঞদের মতে, শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে শীতকাল বড় অগ্নিকাণ্ডের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তারা সারাবছরই অগ্নিনিরাপত্তা চর্চার ওপর জোর দেন।
শীত মৌসুমে গ্যাস সংযোগ বা বৈদ্যুতিক ত্রুটিজনিত অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ফায়ার সার্ভিস রাজধানী ঢাকায় বিশেষ জনসচেতনতা অভিযান শুরু করেছে।
গত বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, কলাবাগান ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সচেতনতামূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
সিকদার বলেন, ‘শীত ও শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সাধারণত বেড়ে যায়। তাই গত সেপ্টেম্বর থেকে আমরা বিভিন্ন স্থানে র্যালি, জনসচেতনতা ও প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের জরুরি হটলাইন ‘১০২’ সম্পর্কে প্রচারণা চালাচ্ছি।’
তিনি আরও জানান, পথচারী ও নিকটবর্তী দোকান মালিকদের গ্যাস চুলা বন্ধ রাখা, বৈদ্যুতিক তারে অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া এবং জরুরি অবস্থায় দ্রুত ফায়ার সার্ভিসকে জানাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে -ধানমন্ডি ২৭ ও ৩২, ফার্মগেট, বাবুবাজার ব্রিজ, মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মোড়, ভিক্টোরিয়া পার্ক, লালবাগ কেল্লা, চকবাজার, হাজারীবাগ, মতিঝিল, কমলাপুর, পোস্তগোলা, আজিমপুর, শাহবাগ ও নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৬টি স্থির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।