আইনি ভিত্তিসহ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এর চূড়ান্ত কপিতে স্বাক্ষর করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে আগামী ৩১ অক্টোবর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদের মধ্যে সনদ সম্পর্কে দেওয়া তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার পদক্ষেপ নিলে তাতে স্বাক্ষর করা হবে বলে জানিয়েছে এনসিপি। দলটি আরও জানিয়েছে, দাবি আদায়ে প্রয়োজনে জনগণকে নিয়ে নতুন কর্মসূচি পালন করা হবে।
চারটি বামপন্থী দলও পরিকল্পনা করছে, কর্মসূচি দেওয়ার মাধ্যমে সনদে স্বাক্ষর না করার কারণ জনগণের সামনে তুলে ধরতে। প্রসঙ্গত, সনদে সংবিধানের চার মূলনীতির উল্লেখ না থাকাসহ সাত কারণে এতে স্বাক্ষর দেয়নি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ। দেশের আট বিভাগে জনসভা করার কর্মসূচি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই চার দল। দলগুলোর নেতারা বলছেন, এসব কর্মসূচি থেকে জুলাই সনদের অসংগতির জায়গাগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ প্রণয়ন করা হলেও শেষ পর্যন্ত সব দল এই সনদে স্বাক্ষর করেনি। অনুষ্ঠানের দিন উপস্থিত ২৫টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৪টি দল সনদে স্বাক্ষর করে। অন্যদিকে অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত এনসিপিসহ মোট ছয়টি দল স্বাক্ষর করেনি। গণফোরাম অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েও গত শুক্রবার স্বাক্ষর করেনি। তবে ‘দাবি পূরণ করায়’ দলটি আজ রবিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে সনদে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে বলে গণফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এনসিপিও জানিয়েছে যে, তিন দফা দাবি মেনে নিলে তারাও স্বাক্ষর করবে।
আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এনসিপি
গতকাল শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে জুলাই সনদ প্রক্রিয়ায় যুক্ত না হওয়ার কারণ তুলে ধরে এনসিপি। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যদি এর (জুলাই সনদ) কোনো আইনি ভিত্তি দেওয়া না হয়, এর কোনো অর্থ তৈরি হবে না। ফলে আমরা এই আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিইনি। যদি এর আইনি ভিত্তি তৈরি না হয়, তা হলে এটা কেবল আনুষ্ঠানিকতাই হবে না, এটি হবে একটি গণপ্রতারণা। এটি হবে জাতির সঙ্গে প্রহসন।’ জনগণের আকাঙ্ক্ষার কোনো বাস্তবায়ন বা প্রতিফলন গত শুক্রবারের অনুষ্ঠানে ঘটেছে বলে এনসিপি মনে করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটি তখনই ঘটবে, যখন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার সার্বভৌম অভিপ্রায় হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস (প্রধান উপদেষ্টা) একটি আদেশ জারির মাধ্যমে এর (জুলাই সনদ) আইনি ভিত্তি তৈরি করবেন এবং সেই ভিত্তি অনুসারে গণভোট এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ ও গণপরিষদ একটি নতুন সংবিধান তৈরি করবে।’
এদিকে একই দিন দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে ‘বৈধতা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিতে নয়; বরং আইনি কাঠামোয়’ শিরোনামে একটি পোস্টার শেয়ার করা হয়। সেখানে তিন দাবি উপস্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ১. আগে জানুক জনগণÑ সনদ বাস্তবায়নের নিয়ম ও গণভোটের প্রশ্ন আগে প্রকাশ করতে হবে। ২. জনগণের নামে আদেশÑ প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে আদেশ জারি করবেন। ৩. জনগণের রায়ই শেষ কথাÑ গণভোটে জনগণ ‘হ্যাঁ’ বললে আর কারও ‘না’ চলবে না। জনগণের রায়ে তৈরি হবে বাংলাদেশের সংবিধান-২০২৬।
এসব দাবি আদায়ে দলটি কর্মসূচি দেওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল শনিবার প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা কর্মসূচিতে যাচ্ছি। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকার এনসিপির তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিলে আমরা সনদে স্বাক্ষর করব। দাবি আদায়ের জন্য রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে কর্মসূচি গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
৮ বিভাগে সমাবেশ করবে চার বামদল
এদিকে সাতটি বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে চারটি বামদলও অনুপস্থিত ছিল। এ অবস্থায় কমিশনের পক্ষ থেকে চারটি দলকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে এ চার দলের একটির সাধারণ সম্পাদক নিশ্চিত করেছেন যে, তারা আর এ আলোচনায় আগ্রহী নয়। এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণের লক্ষ্যে আজ রবিবার দুপুরে পল্টনে বাসদ অফিসে বৈঠকে বসবেন চার দলের নেতারা। প্রাথমিকভাবে দলগুলোর নীতিনির্ধারকরা আটটি বিভাগে আটটি জনসভা করে জুলাই সনদের অসংগতিগুলো তুলে ধরার পরিকল্পনা করেছেন। বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে চার দল রবিবার (আজ) বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। সেখান থেকেই পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে।
আজ স্বাক্ষর করছে গণফোরাম
জুলাই সনদ অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও দ্বিমত থাকায় শেষ মুহূর্তে সনদে স্বাক্ষর করেনি গণফোরাম। এর পর তাদের দাবি অনুযায়ী সনদে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র যুক্ত করায় আজ সোমবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন দলটির দুই প্রতিনিধি। জানতে চাইলে গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘দাবি মেনে নেওয়ার কারণে গণফোরাম সনদে স্বাক্ষর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।