"টেকসই বিনিয়োগে সহায়তা" শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ সংলাপের আয়োজন করেছে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচাম)। রাজধানীর শেরাটন ঢাকা হোটেলে আয়োজিত এ সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সংলাপে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্ত ছিল রিকভার, ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং শেভরন বাংলাদেশ।
অ্যামচাম-এর সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ফরেস্ট ই কুকসন জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে বলেন, “বিশ্ব যদি কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যর্থ হয়, বাংলাদেশকে তখন ব্যাপক তাপপ্রবাহ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।” তিনি দেশের উত্তরাঞ্চলে জনসংখ্যা স্থানান্তরের পাশাপাশি নতুন ১৫টি শহর গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। ঢাকার অতিরিক্ত বিস্তার বন্ধ করে মূল অবকাঠামো ও সেবাখাত বিকেন্দ্রীকরণের ওপরও জোর দেন তিনি। এ ছাড়া কুলিং প্রযুক্তি, পারমাণবিক জ্বালানি, বৈদ্যুতিক পরিবহন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য একটি কৌশলগত রূপান্তর প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “পোশাক খাতে চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপও বাড়ছে। এখনই বিনিয়োগ কাঠামো পুনর্বিন্যাস করতে হবে।” তিনি আরও জানান, বস্ত্র শিল্প টেকসই উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ পানির সংরক্ষণে "ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়াটার ইউজ পলিসি" প্রণয়নাধীন এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবস্থাপনার বাধ্যতামূলক নীতিমালাও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
জ্বালানি খাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি অফিসগুলো ধাপে ধাপে রূপান্তরের পথে রয়েছে। তামাক খাতে ভবিষ্যতের নীতিমালা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করেই প্রণয়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
অ্যামচাম-এর সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, “এলডিসি উত্তরণ, জলবায়ু প্রতিশ্রুতি ও টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এক সংকটপূর্ণ সন্ধিক্ষণে।” পরিবেশগত অবক্ষয় বিনিয়োগ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে তিনি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বকে জোরদার করার আহ্বান জানান।
সংলাপে অংশ নিয়ে রিকভার-এর সিএফও ফেহমি মুহসিন ইউকসেল বলেন, “বাংলাদেশে এখনো শক্তিশালী নীতিকাঠামো, কাঁচামালের জোগান এবং জাতীয় সার্কুলারিটি কৌশল প্রয়োজন।” তিনি জানান, পুনর্ব্যবহৃত তুলা ব্যবহারের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশে তৈরি’ কাঁচামালের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, যেখানে রিকভার-এর মালিকানাধীন বিশ্বের বৃহত্তম তুলা পুনর্ব্যবহার কারখানাটি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ম্যানেজার রেজা মাহমুদ বলেন, “ধূমপানজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে কম ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিক নীতিমালা জরুরি।” নিষেধাজ্ঞার বদলে যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড ও সৌদি আরবের মতো উদাহরণ অনুসরণে বাংলাদেশেও বিজ্ঞানভিত্তিক নীতির দাবি জানান তিনি।
শেভরন বাংলাদেশ-এর কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর মোহাম্মদ ইমরুল কবীর বলেন, “শেভরন বাংলাদেশের গ্যাস সরবরাহের ৬০% পূরণ করছে। ইতোমধ্যে ৪.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ এবং ১২০,০০০-এর বেশি মানুষের জীবনে উন্নয়ন ঘটিয়েছে।” তিনি জানান, শেভরন জাতিসংঘের ঘোষিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ৯টিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে এবং অনশোর গ্যাস অনুসন্ধানে কাজ করছে।
সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা নীতিমালা, বাস্তবায়ন এবং ব্যবসা পরিবেশ সংশ্লিষ্ট চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশ উত্থাপন করেন। আলোচনার সারসংক্ষেপে বলা হয়, এ ধরনের সংলাপ আরও বাড়ানো প্রয়োজন যাতে নীতিনির্ধারকরা বাস্তব চ্যালেঞ্জ ও সমাধান গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে পারেন।
সমাপনী বক্তব্যে অ্যামচাম-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক এম. ওয়াকার উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও এই ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।